
রাজধানীর পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তিন ছাত্রকে মারধরের শিকার হয়েছেন। মারধরের জন্য ট্রাফিক সহায়কদের দায়ী করে শিক্ষার্থীরা পুলিশ বক্স ঘেরাও এবং সড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে তিন ঘণ্টা দয়াগঞ্জ মোড় এলাকায় তীব্র যানজট ও দুর্ভোগ তৈরি হয়। বিকেল চারটার দিকে পুলিশের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আহত চার শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের তালহা জুবায়ের, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের আল-আমিন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সোহেল হোসেন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চৈতী আলম। তাঁরা স্থানীয় ফার্মসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে পরে বাসে করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
মারধরের শিকার শিক্ষার্থী তালহা জুবায়ের প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস যখন দয়াগঞ্জ মোড়ে সিগনালে আটকে ছিল, তখন বাসের কিছু বড় ভাই ট্রাফিকে দায়িত্বরত কয়েকটা ছেলেকে বাসটা ছেড়ে দিতে বলেন। এরপর তারা বাসটি ছেড়ে দিয়ে ভাইদের অকথ্য ভাষায় কথা বলে। পরে সবাই বাস থেকে নেমে আসে। এর মধ্যে ট্র্যাফিকের দায়িত্ব থাকা ছেলেদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। আমি নিচে গিয়ে দেখি আলামিন ভাইকে মারছে। ভাইকে উদ্ধার করতে গেলে, সেখানে আমাকেও মারা হয়। ট্রাফিক পুলিশের লাঠি নিয়ে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে। তখন ট্রাফিকের লোকজন পুলিশ বক্সের সামনে দাঁড়ানো ছিল।’
তবে বাসের চালক কাকন মিয়া বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাগুরার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মারধরের ঘটনা ঘটে। বাসসংকট ও যাত্রায় দেরি হওয়ার কারণে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা বিরক্ত হচ্ছিলেন। এরপর দয়াগঞ্জ মোড়ে এলে সিগন্যালে পড়ে বাসটি। এ সময় শিক্ষার্থীদের কয়েকজন রাস্তায় নেমে যানজটমুক্ত করে বাসটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিন ট্রাফিক সহায়ক তাঁদের পরিচয় জানতে চান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় দিলে তাঁরা উদ্ধত আচরণ শুরু করেন এবং বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় চার শিক্ষার্থী আহত হন।
ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এসে দয়াগঞ্জ মোড়ে জড়ো হন। ওই তিন ট্রাফিক সহায়ক তখন পুলিশ বক্সে আশ্রয় নেন। এরপর শিক্ষার্থীরা পুলিশ বক্স ঘেরাও এবং সড়ক অবরোধ করেন।
এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসেন ট্রাফিক পুলিশের ওয়ারী জোনের ডিসি হারুন উর রশিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, আপনারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আমাদের সহযোগিতা করুন। আমরা যথাযথ আইন মেনে আইনি ব্যবস্থা নেব। যারা অপরাধের সাথে জড়িত ছিল, তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’ পরে অভিযুক্তদের আটক করে গেন্ডারিয়া থানায় নেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক।