
নিজেদের ভবনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ছায়ানট কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার ছায়ানটের সভাপতি সারওয়ার আলী ও সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি গতকাল মারা যাওয়ার পর ক্ষোভ–বিক্ষোভের মধ্যে মধ্যরাতে ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে হামলা হয়। হামলাকারীরা ভবনের প্রতিটি তলা তছনছ করে; বিভিন্ন সামগ্রী নিচে জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই দিন সন্ত্রাসী আক্রমণের শিকার হয় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার।
ছায়ানটের বিবৃতিতে বলা হয়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একদল লোক রাত ১২টার পর ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে জোর করে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায় এবং অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে। তারা ছয়তলা ভবনের সব সিসিটিভি ক্যামেরাসহ অধিকাংশ কক্ষ এবং বহু বাদ্যযন্ত্র, মিলনায়তন, কম্পিউটার ও আসবাব ভাঙচুর করেছে। সার্ভারসহ ছায়ানটের কিছু বাদ্যযন্ত্র ও আসবাব পুড়িয়ে দিয়েছে। অন্তত ৭টি ল্যাপটপসহ গোটা চারেক ফোন ও কিছু হার্ড ডিস্ক লুট করেছে। তাদের ভাঙচুরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ও সরঞ্জামও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে ছায়ানটও গভীরভাবে শোকাহত জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিন্তু ওই সূত্র ধরে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে কেন হামলা সংঘটিত হলো, তা মোটেই বোধগম্য নয়। হয়তো পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করেছে সংস্কৃতিচর্চার বিরোধী গোষ্ঠী।’
বাঙালি সংস্কৃতির লালনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছায়ানট এই হামলার বিচার দাবি করে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় অনানুষ্ঠানিক সংগীতশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের ওপর এই হামলা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে বলেও সরকারকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
হামলার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ছায়ানট নিজেদের মতো করে কাজ চালিয়ে যাবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ছায়ানট একটি স্বেচ্ছাসেবী ও স্বনির্ভর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ছায়ানট কোনো সরকার, বিদেশি সংস্থা বা করপোরেট অনুদান গ্রহণ করে না। সুতরাং ছায়ানট আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই ক্ষতি পূরণ করবে। সংগীত এবং শিশুদের সাধারণ শিক্ষায় এই সাময়িক বিঘ্নের দ্রুত প্রতিকার করতে বদ্ধপরিকর।
বাঙালির আবহমান সংগীত–সংস্কৃতির সাধনা ও প্রসারে ছায়ানট তার মতো করেই কাজ করে যাবে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ছায়ানটের কাজের ক্ষেত্র রাজনীতি নয়, সংগীত–সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে ছায়ানট। ছায়ানট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সমাজ গড়তে প্রয়াসী।