
বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে আনা গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা ভ্যান থেকে সড়কে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সড়ক ভরে গেছে বর্জ্যে। এতে যানবাহন চলাচলে ঘটছে বিঘ্ন। আবর্জনায় ভরা সড়কের একটি লেন দিয়ে কোনোমতে চলছে যানবাহনগুলো।
আজ মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি রাজধানীর প্রগতি সরণির নতুনবাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকার। ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা বর্জ্য সড়কে ফেলেছেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে ভ্যান সার্ভিসের কর্মীদের প্রশ্ন করতে শোনা যায়, ‘রাস্তায় ময়লা ফেলছেন কেন? আপনাদের কী বেতন হচ্ছে না?’ তখন পাশ থেকে একজনকে বলতে শোনা গেছে, ‘বেতন দিচ্ছে না, আবার ডাস্টবিনও... (পরের কথাগুলো অস্পষ্ট)।’
বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়ার্ড এলাকার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অস্থায়ী বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) নিয়ে আসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। পরে সেগুলো ডাম্প ট্রাক কিংবা কম্পেক্টর ট্রাকের মাধ্যমে আমিনবাজারের স্থায়ী বর্জ্য অপসারণ কেন্দ্র বা ল্যান্ডফিলে নেওয়া হয়। নতুন বাজারের ওই এসটিএসে ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং অঞ্চল-৯–এর ৩৯ ও ৪০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসাবাড়ির ময়লা–আবর্জনা অপসারণ করা হয়।
সড়কে আবর্জনা ফেলে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এসটিএসে জমা করা আবর্জনা পে-লোডার যন্ত্রের মাধ্যমে ট্রাকে ওঠানো হয়। বাসাবাড়ি থেকে দিনভর আবর্জনা আনার পর এ কাজটি করা হয় বিকেল থেকে রাতের মধ্যে। কিন্তু গতকাল সোমবার রাতে ওই এসটিএস থেকে আবর্জনা আমিনবাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পে-লোডার যন্ত্রটিতে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ওই এসটিএস আবর্জনায় ভরে যায়। যে কারণে বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা নিয়ে এসে এসটিএসে রাখতে না পেরে ভ্যান সার্ভিসের কর্মীরা সড়কে ফেলে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাসাবাড়ি থেকে ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের যে কর্মীরা আবর্জনা সংগ্রহ করেন, তাঁরা সাধারণত একাধিক ট্রিপে ময়লাগুলো নিয়ে আসেন। একবার ময়লা এনে এসটিএসে ফেলে গিয়ে আরেকবার বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে হয়। যখন বেলা ১১টার দিকে ভ্যানকর্মীরা প্রথম ট্রিপের আবর্জনা নিয়ে আসেন, তখন দেখতে পান এসটিএসের ফটক বন্ধ। তাই তাঁরা ময়লাগুলো রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যান।
রাস্তায় আবর্জনা ফেলার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম সামসুল আলম প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ওই এলাকায় এসটিএস থেকে আবর্জনা ল্যান্ডফিলে নেওয়ার জন্য যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োজিত করা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের আবর্জনা ওঠানোর গাড়িতে সমস্যা ছিল। তাই গতকালের ময়লা সঠিক সময়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভ্যান সার্ভিসের কর্মীদের ময়লা ফেলে যাওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টার মধ্যে বেলা দুইটার দিকেই সড়কে ফেলে যাওয়া আবর্জনা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে সামসুল আলম আরও বলেন, ভ্যান সার্ভিসের কর্মীদের উচিত ছিল অপেক্ষা করা। কিন্তু তাঁরা সেটা না করে সড়কে ময়লা ফেলে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি ল্যান্ডফিলে ময়লা নিতে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেও সতর্ক করা হয়েছে।
ভ্যান সার্ভিসের কর্মীদের বেতনের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, তাদের বেতন সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেসব প্রতিষ্ঠান আবর্জনা সংগ্রহের কাজটি করেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোই ভ্যানকর্মীদের পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন। তাই এ ঘটনার সঙ্গে বেতন না দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।