চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মারধর করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন শাওন গতকাল শুক্রবার দুপুরে গ্রেপ্তার হন। সেদিন রাত থেকে অনেকবার যোগাযোগ করা হলেও পুলিশ তা স্বীকার করছিল না। পরে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত থেকে এ মামলায় জামিন পান নাছির।
শেখ নাঈম আহমেদ নামের একজন ট্রাভেল এজেন্ট চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মারধর করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে গুলশান থানায় মামলাটি করেন। মামলায় নাছির ছাড়াও আসামি হিসেবে মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ হেলাল নামের দুজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। নাছির প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মোহাম্মদ হেলাল চট্টগ্রাম দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে শুক্রবার রাত থেকে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি), গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরে এ বিষয়ে জানতে আজ শনিবার দুপুরে গুলশান থানায় গেলে ওসির কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কর্তব্যরত কর্মকর্তার (ডিউটি অফিসার) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন। ওসি কোথায় আছেন, জানতে চাইলে তিনি গুলশান বিভাগের ক্রাইম কনফারেন্সে আছেন বলে ডিউটি অফিসার জানান।
পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। কয়েক দিন ধরে বিশ্রামে আছেন।
মামলার এজাহারে শেখ নাঈম আহমেদ উল্লেখ করেছেন, তিনি ৯ অক্টোবর বেলা একটার দিকে ব্যবসায়িক আলোচনায় অংশ নিতে গুলশান-১ এলাকায় যান। আলোচনা শেষ করে গুলশান-১ গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে বিসমিল্লাহ হানিফ বিরিয়ানি অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে খেতে যান। খাওয়া শেষ হলে নাছির উদ্দিন শাওন তাঁকে ফোন করে দুবাইয়ের বিমান টিকিট কাটবে বলে তাঁর অবস্থান জানতে চান। তিনি নাছিরকে তাঁর অবস্থান জানান। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাছির (২৮), মোহাম্মদ ইদ্রিস (৪৬), মোহাম্মদ হেলালসহ (২৬) অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জন তাঁকে অস্ত্রের মুখে সেখান থেকে জোর করে গুলশানের আরেকটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে যান।
শেখ নাঈম আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, এ সময় তাঁর কাছে থাকা ফোন, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ নিয়ে নেন তাঁরা। এরপর তাঁরা তাঁর কাছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করেন। এরপর সেখানে তাঁর (শেখ নাঈম) ভাইয়ের ছেলে এলে তাঁকে ল্যাপটপটি দিয়ে দেন নাছিরেরা। তিনি টাকা দিতে রাজি না হলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁকে গুলশান-১ এলাকার লেকপাড়ে নিয়ে মারধর করে রাত ১০টার মধ্যে টাকা দিতে বলেন, না হলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন তাঁরা। মারধরের মুখে তিনি তাঁর পরিবারকে খবর দেন এবং কিছুটা সময় চান। টাকা না আসায় রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁরা তাঁকে তাঁদের মোটরসাইকেলে করে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার পাশ দিয়ে হাতিরঝিল সংযোগ সড়কের দিকে নিয়ে যান। এ সময় তিনি চিৎকার করলে যৌথ বাহিনীর চেকপোস্টে তাঁদের থামানো হয়। তখন তাঁকে ও আসামি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে ফেলে অন্য আসামিরা পালিয়ে যান। পরে যৌথ বাহিনী ইদ্রিসকে আটক করে তাঁর (নাঈম) মুঠোফোন উদ্ধার করে ফেরত দেন। যৌথ বাহিনী তাঁদের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ইদ্রিসকে গুলশান থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, হাতিরঝিল এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী নাঈমকে সেনাবাহিনী উদ্ধার করে। এ সময় ইদ্রিসকে আটক করে সেনাবাহিনী। শুক্রবার এ ঘটনায় নাছির ও হেলালকে গ্রেপ্তার করে। আজ শনিবার আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়।
জামিনের পর এ বিষয়ে নাছির উদ্দিন শাওন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার বাদী শেখ নাঈম আহমেদ তাঁর ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনেক মানুষের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তেমনি মোহাম্মদ ওয়াহেদ নামের তাঁর এক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এ–সংক্রান্ত প্রমাণ তাঁর কাছে আছে। টাকার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। পরে ভুল বুঝতে পেরে বাদী অনাপত্তি দেওয়ায় আদালত তাঁকে জামিন দেন। তবে বাকি দুজন এখনো কারাগারে আছেন।