জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন পরামর্শ প্রতিবেদনে দুর্বলভাবে এসেছে। প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত ৩২টি আইন সংস্কারে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগবে। অন্যদিকে কমিশন সদস্য বলেছেন, ইংরেজি শব্দ হওয়ায় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’–এর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য সংস্কার প্রতিবেদন: কীভাবে দেখব’ শীর্ষক কর্মশালায় জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য এ কথাগুলো বলেন। নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ মূলত স্বাস্থ্য খাতের সাংবাদিকদের জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করে। সাংবাদিকেরা পেশাগত কাজে সংস্কার প্রতিবেদন কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এই কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইডের আঞ্চলিক পরিচালক খাইরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুপারিশগুলোর প্রতিফলন থাকা জরুরি।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা কী হওয়া দরকার, তা প্রতিবেদনের ১০ নম্বর পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে। এই পরিচ্ছেদ খুবই ছোট, মাত্র এক পাতার। আবার কোনো পরিচ্ছেদ লেখা হয়েছে ৮০ পাতার বেশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ১২টি মোট ৩২টি আইন সংস্কারের প্রস্তাব করেছে কমিশন। ৩২টি আইন সংশোধন করতে বহু বছর সময় লেগে যাবে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশন কী কী সুপারিশ করেছে, তার বর্ণনা দেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ ইংরেজি শব্দ হওয়ায় তা পরিবর্তন করে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, স্বাস্থ্য পুলিশ গঠনের সুপারিশ বাস্তবসম্মত হয়নি। এতে মানুষের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ পোহানোর ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
এর আগে স্বাস্থ্য অর্থায়ন বিষয়ে কমিশন প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন আর একজন কমিশন সদস্য আহমদ এহসানূর রহমান। বাংলাদেশের জনমিতির ক্রান্তিকালীন পরিবর্তন, রোগতাত্ত্বিক পরিস্থিতি, অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি, স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বরাদ্দের ধরন—এসব বিষয়কে বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা ইয়াসিন আহমেদ বলেন, কমিশন একটি সমন্বিত ও দরকারি প্রতিবেদন দিয়েছে। এর সবগুলো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে বহু সময়ের প্রয়োজন। সে জন্য অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। সুপারিশ বাস্তবায়ন কাজে সরকার ও কমিশনকে সহায়তা করার জন্য তিনি একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা বলেন।