জাতীয় চিড়িয়াখানার সিংহী ‘ডেইজি’ মূল খাঁচা থেকে বের হয়ে পড়েছিল শুক্রবার বিকেলে। চিড়িয়াখানার কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তড়িঘড়ি করে একটি লোহার খাঁচা দিয়ে প্রাণীটির পথ আটকে দেন। তা না হলে দর্শনার্থীসহ অন্যদের বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত।
গতকাল শনিবার মিরপুরে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, ডেইজির মূল খাঁচার দরজার বাইরে দর্শনার্থী যাতে খাঁচার একদম কাছে যেতে না পারে, সে জন্য লোহার গ্রিলের ব্যারিকেড দেওয়া। তারপর বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা। ডেইজি এ ফাঁকা জায়গায় চলে এসেছিল।
সিংহী বের হয়ে সেখানকার পানির পাম্পের পাশে হরিণের খাঁচার কাছে বসে। হরিণের দল ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন জু অফিসার মো. ওবায়দুল বারী খান। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা নতুন করে বেড়া লাগিয়েছেন। তাঁদের কোনো ঝুঁকিভাতা নেই বলে জানান ওবায়দুল বারী।
গতকাল ডেইজির শারীরিক ও মানসিক ধকলের কথা চিন্তা করে ডেইজিকে মূল খাঁচার ভেতরের নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে বের করা হয়নি। তবে চিড়িয়াখানার কর্মীদের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে পরিচালক বললেন, এমনিতে অন্য দিনের মতোই ডেইজি খাওয়াদাওয়া করছে। তবে পায়চারি করছে ঘনঘন।
শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে খাঁচা থেকে বের হয়ে পড়ে সিংহীটি। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত দর্শনার্থীদের চিড়িয়াখানা থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পৌনে দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘ট্রাঙ্কুলাইজারগান’ দিয়ে ইনজেকশন পুশ করে সিংহীটিকে অচেতন করা হয়। পরে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সেটিকে আবার খাঁচায় নেওয়া হয়।
ধারণা করা হয়েছিল, এ ঘটনার পর দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করবে, সংখ্যা কমে যাবে। তবে চিড়িয়াখানার দেওয়া তথ্য বলছে, গতকাল ১৫ হাজার দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছিলেন।
এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। শুক্রবার রাতেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, চিড়িয়াখানা অভ্যন্তরীণ আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির সদস্যরা কীভাবে সিংহী খাঁচা থেকে বের হয়ে পড়ল, এটা বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানার নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তারও সুপারিশ করবেন।
ডেইজির ঘটনার পর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
চিড়িয়াখানার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ঘটনার পরই চিড়িয়াখানার কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়া, বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করার জন্য র্যাপিড রেসপন্স এবং নিরাপত্তার বিষয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে।
জনবল সমস্যার কথা উল্লেখ করে পরিচালক বলেন, চিড়িয়াখানার মূল পদ আছে ২৩৭টি, এর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৭৭ জন। অর্থাৎ ১৬০টি পদ শূন্য।
মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়ন (প্রথম পর্যায়) শিরোনামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের পাঠানো হয়েছে বলে জানালেন চিড়িয়াখানার পরিচালক।
ডেইজি কেমন আছে
জাতীয় চিড়িয়াখানায় মোট পাঁচটি সিংহ ও সিংহী রয়েছে। যে খাঁচা থেকে ২০০ কেজি ওজনের ডেইজি বের হয়েছিল, সেখানে আরেকটি বয়স্ক সিংহী আছে, এই সিংহীর নাম ‘মুক্তা’।
গতকাল ডেইজির শারীরিক ও মানসিক ধকলের কথা চিন্তা করে ডেইজিকে মূল খাঁচার ভেতরের নির্দিষ্ট কক্ষ থেকে বের করা হয়নি। তবে চিড়িয়াখানার কর্মীদের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে পরিচালক বললেন, এমনিতে অন্য দিনের মতোই ডেইজি খাওয়াদাওয়া করছে। তবে পায়চারি করছে ঘনঘন।
ডেইজির বয়স হয়েছে ৫ বছর। ডেইজির জন্য সপ্তাহে ৫ দিন ৭ কেজি করে গরুর মাংস বরাদ্দ। একদিন দেওয়া হয় জীবন্ত মুরগি। ওজন ঠিক রাখার জন্য একদিন উপোস থাকতে হয় ডেইজিকে।
চিড়িয়াখানার হাসপাতালের সায়েন্টিফিক অফিসার, মাংসাশী প্রাণী শাখার প্রধান এবং নিরাপত্তা শাখার প্রধান এই তিন দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসক মো. ওয়ালিউর রহমান। তিনি বলেন, অনেক ধকলের পরও ডেইজি অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। তবে কিছুটা ভয় পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ওয়ালিউর রহমান বললেন, ডেইজির ঘটনার পর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।