সেন্ট গ্রেগরীতে গণিত উৎসব

গণিতের ভয় জয়ে প্রতিদিন চর্চা করতে হবে

সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ জাতীয় গণিত উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর
ছবি: শাহাদাত হোসেন

গণিতের ভয় জয় করতে চাইলে গণিতের প্রতি অনুরাগ থাকতে হবে। প্রতিদিন গণিত চর্চা করতে হবে। কোনো বিষয়ে চর্চা করলেই একজন সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারে। বর্তমান যুগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগ। বিজ্ঞানে ভালো করতে হলে গণিতে ভালো করতে হবে।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ জাতীয় গণিত উৎসবের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিরা এ কথা বলেন। সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গ্রেগরিয়ান গণিত ক্লাবের আয়োজনে গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া এ উৎসব আজ শনিবার পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

আজ বিকেলে অতিথিদের গার্ড অব অনার দিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে নেওয়া হয়। এরপর ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের নিজস্ব সংগীত পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গণিত ক্লাবের মডারেটর সজল রোজারিও।

সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রাদার প্লাচিড পিটার রেবেরিওর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক মনিরুল আলম সরকার। এ ছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

আনিসুল হক বলেন, শুধু প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করলে হবে না। কবিতা করতে হবে, গান শুনতে হবে, নাচ করতে হবে, নাটক করতে হবে, ছবি দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘গণিত উৎসবে লেখা আছে গণিত পড়ো, আমি বলব গণিত ভালোমতো শেখার উপায় হচ্ছে বেশি করে নিয়মিত গণিত চর্চা করা। কেবল চর্চা করলেই একজন সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়।’

সেন্ট গ্রেগরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে চতুর্থ জাতীয় গণিত উৎসব উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘তোমরা যদি গণিতে সেরা হতে চাও, অনেক গণিত করবে। যদি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাও, সে ক্ষেত্রেও গণিত লাগবে, ডাক্তার হতে চাও, ডাক্তারিটাই ভালো করে পড়তে হবে। যদি কবিতা লিখতে চাও, লেখক হতে চাও প্রচুর বই পড়তে হবে, সাহিত্য পড়তে হবে। “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” এই প্রবাদ সব সময় মনে রাখবে। লেগে থাকা ছাড়া সফল হওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মো. মনিরুল আলম সরকার বলেন, বর্তমান যুগ এআইয়ের যুগ। বিজ্ঞানে ভালো করতে হলে গণিতের চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘ডিপসিক (এআই) যারা শুরু করেছে, তারা সবাই গণিতে ভালো। আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো সফলতা অর্জন করছে।’

গণিতকে নিজের মতো করে আনন্দ নিয়ে পড়তে হবে বলে পরামর্শ দেন অধ্যক্ষ ব্রাদার প্লাচিড পিটার রেবেরিও। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকেরা সব সময় বলেন, আমরা কি গণিত পরীক্ষার জন্য পড়াব না শেখানোর জন্য পড়াব? শিক্ষার্থীদের বলি, যদি গণিত শিখতে চাও, পরীক্ষার বাইরে শিখতে হবে। পাস করা আর গণিত আনন্দ নিয়ে শেখার অনেক পার্থক্য আছে। গণিতে পাস করতে চাইলে গণিত প্রতিদিন চর্চা করতে হবে।’

অধ্যক্ষ প্লাচিড পিটার আরও বলেন, ‘গণিতের ভয় জয় করতে চাই, তাহলে গণিতের প্রতি আমাদের একটা ভালোবাসা একটা অনুরাগ থাকতে হবে, তাহলে এমনিতেই তোমাদের গণিত হয়ে যাবে। আমি স্বপ্ন দেখি, তোমরা গণিত নিয়ে একদিন বিশ্ব জয় করবে।’

অনুষ্ঠানে সেন্ট গ্রেগরী স্কুলের শিক্ষক জয়া দত্ত, মোস্তফা আল বারী, অতশী সরকার, নওশীন শারমিলি, গ্রেগরীয়ান গণিত ক্লাবের সভাপতি সাদ বিন আহমদ, সহসভাপতি এসকে মো. সাদিপ প্রমুখ বক্তব্য দেন। গণিত উৎসব উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

গতকাল শুরু হওয়া এ উৎসবে শিক্ষার্থীরা গণিত অলিম্পিয়াড, হিউম্যান ক্যালকুলেটর, জিওমেট্রিক স্কেচপ্যাড, জিও জোন, ফাইভ মিনিটস প্রফেসর, হিস্টোরিক কুইজ, ম্যাথ আইকিউসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেয়।

উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল রেটিনা, সহযোগী পৃষ্ঠপোষক ইস্পাহানি লিমিটেড এবং আইসক্রিম পার্টনার পোলার আইসক্রিম।