
ঘড়ির কাঁটা রাত তিনটার দিকে। রাজধানীতে তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে বাবা আসিফুল ইসলামের কোলে বসে আছে ছোট্ট শাফিকুল ইসলাম ফারাজ। পাশে আসিফুলের স্ত্রী, তাঁর কোলে আরেক শিশুসন্তান শারিফুল ইসলাম ফায়দা। আসিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এখানে শুধু হাদি হত্যার বিচার চাইতে এসেছেন। তীব্র শীতেও তাঁদের দুই সন্তানের কিছু হবে না বলে তাঁর বিশ্বাস। তিনি চান, তাঁর ছেলেরা বড় হয়ে হাদির মতো প্রতিবাদী হোক।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতের এ দৃশ্য রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের। শীত উপেক্ষা করে এখানে যাঁরা খোলা আকাশের নিচে বসে আছেন, তাঁরা সবাই এসেছেন শরিফ ওসমান বিন হাদির বিচারের দাবিতে। সেখানে স্লোগান হচ্ছে ‘হাদি হত্যার বিচার চাই’ বলে, চলছে কবিতা আবৃত্তি, কেউ গাইছেন হাদিকে নিয়ে গান। কেউ আবার একটু হেঁটে গিয়ে দূর থেকে জিয়ারত করে আসছেন হাদির কবর!
ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল শুক্রবার সারা রাত অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। গতকাল রাতে এ ঘোষণার পর নারী, পুরুষ, শিশুসহ অনেকেই এসেছেন এখানে। তাঁদের একজন মমিনুল ইসলাম। এসেছেন আজিমপুর থেকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলার প্রেমিক হয়ে হাদি জীবন দিয়ে গেছেন। যাঁরা সত্যের পথে থাকে, তাঁরা কখনো ভয় পায় না। প্রয়োজনে তিনিও হাদির মতো জীবন দিতে রাজি।’
তারেক রহমানকে সহযোগিতা করা হবে
আয়োজক পক্ষ ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে হাদি হত্যার বিচার দাবিতে আজ শনিবারও শাহবাগ মোড়ে অবরোধের ঘোষণা দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এদিন সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওসমান হাদির কবর জিয়ারতে আসার সময়সূচি ঘোষণা করা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনকিলাব মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ও ডাকসু নেত্রী ফাতিমা তাসনিম জুমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। এই ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের তরফ থেকে থাকবে।’
এর আগে রাত আড়াইটার দিকে তৃণমূল এনসিপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক মুনতাসীর মাহমুদকে দেখা যায় জমায়েতস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান ভেঙে নয়, প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে। হাদি ভাই প্রতিষ্ঠান গড়তে চেয়েছিলেন।’ ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এর আগে তিনি ওসমান হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান।
দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, শাহবাগে তখনো কেউ কেউ আসছেন। আর যাঁরা দীর্ঘক্ষণ এখানে ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন। এমনই একজন মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি জিগাতলা থেকে তাঁর স্ত্রী ও ছয় বছরের মেয়ে আসফিয়াকে নিয়ে এসেছিলেন। কয়েক ঘণ্টা থাকার পর তিনি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান।