ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর–সংলগ্ন মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক, সতর্ক অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে গিয়েছিলেন একদল বিক্ষোভকারী। সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই এলাকাসংলগ্ন মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দিনভর সংঘর্ষের পর অবশেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।

আজ সোমবার রাত আটটার পর মিরপুর থেকে নিউমার্কেটগামী সড়কটি খুলে দেওয়া হয়। আর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিউমার্কেট থেকে মিরপুরগামী সড়কটি খুলে দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের সড়কটিতে ছোট ছোট ইটের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে বিক্ষোভকারীদের কাউকে দেখা যায়নি। পরে রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কটির প্রবেশমুখে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সড়কটি দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি এলাকাটিতে বিজিবির বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক রাতে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিক্ষোভকারীদের সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়েছি। যান চলাচল শুরু হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে রাতেও পুলিশের সতর্ক অবস্থান থাকবে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড হয়। সাবেক আইজিপি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড (তিনি রাজসাক্ষী বা অ্যাপ্রুভার ছিলেন)।

এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রোববার দিবাগত রাত থেকেই বিভিন্ন দল, সংগঠন, প্ল্যাটফর্ম ও ব্যক্তি পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ওই বাড়িটি ভাঙার ঘোষণা দেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

রাত ১০টার পর নিউমার্কেট-মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার আগেই ঢাকা কলেজের সামনে থেকে দুটি খননযন্ত্র নিয়ে আবার ৩২ নম্বর সড়কের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ব্যারিকেড একাংশ সরিয়ে কিছু বিক্ষোভকারী ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটির ভেতরে ঢুকে যান।

এ অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য আসেন। তাঁরা সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেন। বাধা পেয়ে বিক্ষোভকারীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ছাত্রলীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দেন।

দফায় দফায় সংঘর্ষ

বেলা ১টার পরে বিক্ষোভকারীরা একটি খননযন্ত্র ৩২ নম্বর সড়কের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। তখন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটা করে। এতে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ঢাকা মিরপুর সড়কের পাশে বিভিন্ন গলির মুখে অবস্থান নেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বিক্ষোভকারীরা আবার মূল সড়কে এসে অবস্থান নেন। এভাবে দফায় দফায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকেলের দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে র‍্যাব ও বিজিবির সদস্যরা যোগ দেন। রাতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ১০টার পরে এই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।