
মোহাম্মদ নাজমুল। আজ মঙ্গলবার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে যে পোশাক কারখানা ভবনে আগুন লাগে, সেখানে ‘কাটিং মাস্টার’ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এক বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করেন।
ঘটনার বিবরণে নাজমুল বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। ভবনের সামনের দিকে এসে জানালা খুলে দেখেন, বিপরীত পাশের রাসায়নিকের গুদাম ও একটি ‘ওয়াশ কারখানায়’ দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাদের কারখানার ভেতরেও আগুনের ফুলকি এসে ধোঁয়া সৃষ্টি হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাপড় দিয়ে নাক–মুখ বেঁধে ফেলেন। দৌড়ে পেছনের দিকে গিয়ে চারতলার জানালার গ্রিল ভাঙেন। পরে তিনিসহ চারজন সেখান দিয়ে পাশের টিনের ছাউনির ওপর লাফিয়ে পড়েন। এ সময় তিনি তিনতলা থেকে আরও চারজনকে জানালা ভেঙে ওই দিকে নামতে দেখেন।
নাজমুল জানান, তাঁদের এই কারখানা ভবনটি ৫ তলা। চার তলার ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে আরেকটি তলা করা হয়েছে। ভবনের নিচতলা খালি। দোতলায় একটি টি-শার্ট প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর নাজমুলদের পোশাক কারখানা তিন ও চারতলা মিলিয়ে। নাম আরএন ফ্যাশন। মালিক দুজন, নাম নজরুল ইসলাম ও রেজাউল ইসলাম। তাঁদের কারখানায় সাধারণত গেঞ্জি তৈরি করা হয়। পাঁচতলায় আরেকটা প্রিন্টিং কারখানা, নাম বিসমিল্লাহ ফ্যাশন। সেটার মালিক রাজীব নামের একজন। তাঁদের পোশাক কারখানার দুটি তলায় ২০ জনের মতো কর্মী আছেন। ভবনের মাঝামাঝি একটাই সিঁড়ি।
নাজমুল বলেন, চারতলা থেকে তিনিসহ চারজন নামতে পেরেছেন। বাকিরা হলেন আল মামুন, সোহেল ও জাহিদ। আর তিনতলা থেকে নেমেছেন নজরুল, নতুন কাজে যোগ দেওয়া একটা ছেলে, কারখানার পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং কিউসি সুরুজ নামের একজন ক্রেতার (বায়ার) প্রতিনিধি।
আরএন ফ্যাশনে ৫ হাজার হুডির ফরমাস ছিল ব্যবসায়ী কাজী রেমানুল হকের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর পুরো অর্ডার আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই রাসায়নিক গুদামের মালিকের আরও গুদাম রয়েছে। ২০১৯ সালে গাবতলীর দিয়াবাড়িতে তাঁর আরেকটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগেছিল। শিয়ালবাড়ির ৪ নম্বর সড়কেও তাঁর আরেকটি গুদাম রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস বলেছে, ওই রাসায়নিক গুদাম বা পোশাক কারখানা কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ বা আগুন লাগলে তা সামলানোর কোনো ব্যবস্থা ছিল না।