ঈদুল আজহায় নগরজীবনে গৃহস্থালির কাজ অনেক বেড়ে যায়। সকালে নামাজ পড়া, এরপর পশু কোরবানি, মাংস কাটা, বিলিবণ্টনে দুপুর গড়িয়ে নামে বিকেল। বাড়ির নারী সদস্যরা রান্নার পাশাপাশি ব্যস্ত থাকেন অতিথি আপ্যায়নে। কোরবানির ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অবকাশ কম। তবে ঈদের ছুটি বাড়তে বাড়তে এখন ১০ দিনে এসে ঠেকেছে। তাই চাইলে ঢাকার আশপাশেই আয়েশ করে কাটিয়ে আসা যায় গোটা একটা দিন। রাজধানীর অদূরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে আসার মতো তেমনি কয়েকটি জায়গার খবর থাকছে এখানে।
ঢাকার কাছেপিঠেই রয়েছে একটি শান্ত-স্নিগ্ধ গ্রাম। সারা দিন গ্রামে ঘুরে সন্ধ্যা নামার আগে সহজেই ফিরতে পারবেন নাগরিক ডেরায়। ছায়া-সুনিবিড় গ্রামটির নাম সাদুল্লাহপুর। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গ্রামটিতে যেতে চাইলে প্রথমে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে বাস ধরে যেতে হবে সাভার বাসস্ট্যান্ডে। এরপর ওভারব্রিজ পার হয়ে পূর্ব দিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তা ধরতে হবে।
তুরাগ নদের তীরে অবস্থিত গ্রামটি ফুল আর সবুজে ঢাকা। স্নিগ্ধ গ্রামটি দেখতে অনেকটা পটে আঁকা ছবির মতো। গ্রামবাসীর অধিকাংশই ফুলচাষি। বিশেষ করে মাঠজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় গোলাপ ফুল। মৃদুমন্দ বাতাসে শত শত গোলাপের দুলে ওঠা আপনাকে ভাসাবে রঙের ভেলায়।
বর্ষাকালে ঢাকা থেকে নৌকায় যাওয়া যায় গ্রামটিতে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে গিয়ে বাস বা অটোতে উঠে বেড়িবাঁধ বোটানিক্যাল গার্ডেনের ফটকে নামতে হবে। বটতলা ঘাট থেকে নৌকায় তুরাগ পাড়ি দিয়ে নামতে হয় গ্রামের ঘাটে। এই রুটে সড়কপথেও যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিরুলিয়া ব্রিজ পার হয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রঙিন গ্রাম সাদুল্লাহপুরের দেখা মিলবে।
গোলাপের পাশাপাশি গ্রামটিতে হলুদ গাঁদা, জারবেরা, ক্যালেন্ডিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানান জাতের ফুলের চাষ হয়। চড়ুইভাতির আবহে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হেঁটে, হাঁপিয়ে গেলে অটোতে উঠে পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। গ্রামটির প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় রয়েছে ফুলের বাগান। ঘরদোর পরিপাটি করে সাজানো। রাস্তাঘাটও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
ফুলের মাঠের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট পিচঢালা পথ; মনে করিয়ে দেয়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকলে বাংলার যেকোনো গ্রাম অনিন্দ্যরূপে গড়ে তোলা যায়।
বাড়ির রান্না করা খাবার বহন করার হ্যাপা নিলে প্রায় নিখরচায় সাদুল্লাহপুর গ্রাম ঘুরে আসতে পারেন। তবে গ্রামীণ হালকা খাবার, গরম–গরম জিলাপি আর দেশি আলুর শিঙাড়ার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। গ্রামের টং দোকানগুলোয় দুধ-চায়ের পাশাপাশি ফুচকা ও চটপটিও পাওয়া যায়।
ঢাকার পাশে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রায় ১০০ বিঘা আয়তনের ভূমিতে গড়ে উঠেছে কমিউনিটি ভিলেজ। তিন দিকে লেক দিয়ে ঘেরা মানবিক গ্রামটিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাঠাগার, একটি স্কুল, মসজিদ আর ছোট ছোট কুটির।
২৫ হাজার গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ গ্রামটির গর্বের ধন একটি পার্ক, লোকমুখে যা জিন্দা পার্ক নামে পরিচিত। গাছগুলোকে ঘিরে মানুষ, পাখপাখালি আর সরীসৃপদের এক অপূর্ব মেলবন্ধন গড়ে উঠেছে। পার্কটিতে রয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ, মাটির ঘরবাড়ি, ট্রি-হাউস, খোলা মাঠ আর ক্যানটিন।
সাধারণ দর্শনার্থীরা টিকিট কেটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই কমিউনিটি ভিলেজে সময় কাটাতে পারেন। পার্কে ‘অগ্রপথিক পল্লী সমিতি’র নিজস্ব রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেখানে সুলভ মূল্যে মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। মূলত অগ্রপথিক পল্লী সমিতির উদ্যোগে ১৯৮২ সালে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কমিউনিটি ভিলেজটি গড়ে উঠেছে।
অগ্রপথিক পল্লী সমিতির স্বপ্নদ্রষ্টা তবারক হোসাইন বলেন, ‘প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের মেলবন্ধনে আমরা একটি মানবিক গ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। দরদি সমাজের প্রতিচ্ছবি এই গ্রামকে আমরা আদর করে “শান্তিকানন” বলে ডাকি।’
ঢাকার পাশের এই শান্তিকানন আপনার ঈদের ছুটির ‘চেকলিস্টে’ প্রথমেই থাকতে পারে। ঢাকা থেকে জিন্দা পার্কে যাওয়ার অনেকগুলো
পথ আছে। তবে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে প্রথমে ৩০০ ফিটে যাওয়া। এরপর কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজে। সেখান থেকে বাইপাস সড়ক হয়ে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাতের ডানে ফিরলেই এই মায়াকাননের দেখা মিলবে।
ঢাকার আশপাশে প্রকৃতি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামের মধ্যে গড়ে উঠেছে রিসোর্ট। সবুজে ঘেরা কুটির বা কটেজগুলোয় রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, জিমনেসিয়াম, মাছ শিকার থেকে হালের কায়াকিং—রিসোর্টের চৌহদ্দির মধ্যে মিলবে সহজেই। বেশ কয়েকটি রিসোর্টে রয়েছে জিমনেসিয়াম, স্পা, সাইক্লিং, বারবিকিউ সুবিধা। কয়েকটিতে রয়েছে ‘ওয়াচ টাওয়ার’, যেখান থেকে গ্রামের সবুজ প্রকৃতি ও অনিন্দ্যসুন্দর পাখিদের সহজেই অবলোকন করা যায়।
প্রায় সারা বছরই প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনায় মুখর থাকে রিসোর্টগুলো। পরিবেশ-প্রকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় সারাহ রিসোর্ট, ছুটি রিসোর্ট, জলেশ্বরী রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট, ঢালিস আম্বার নিবাস, মাওয়া রিসোর্ট, ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, জল ও জঙ্গলের কাব্য, ধানসিঁড়ি রিসোর্ট, গ্রিন হ্যাভেন কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।
গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি ও ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন গ্রামটির নাম সুকুন্দি। মায়াঘেরা এই গ্রামে প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে ছুটি রিসোর্ট তার পসরা সাজিয়েছে। গ্রামীণ আবহে তৈরি রিসোর্টটিতে রয়েছে ছনের তৈরি ঘর, পিকনিক স্পট, সুইমিংপুল, মাছ শিকারের আয়োজন। ছুটি রিসোর্টে নৌভ্রমণ এবং সংরক্ষিত বনে তাঁবু টানানোর সুযোগ যোগ করে বাড়তি আনন্দ।
বোটিং, কায়াকিং, জিপ লাইনিং থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের অত্যাধুনিক সুবিধা রয়েছে সারাহ রিসোর্টে। গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িসংলগ্ন প্রায় ২০০ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এই রিসোর্টের নান্দনিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রথম শ্রেণির যাপনসুবিধা-সংবলিত রিসোর্টটি কিন্তু বেশ খরুচে।
ঢালিস আম্বার নিবাসের অবস্থান মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। রিসোর্টটিতে ২৬ হাজার বর্গফুটের একটি সুবিশাল সুইমিংপুল রয়েছে। নারীদের জন্য সুইমিংয়ে আয়োজন পৃথক। কটেজ, বোটিং, মাছ শিকার, শিশুদের খেলার জায়গাসহ নানা সম্ভারে ভরপুর আধুনিক এই রিসোর্ট।
ঢাকার খুব কাছে আমিনবাজারে জিওন রিসোর্টের অবস্থান। ডে ট্রিপ অথবা রাতে অবস্থানের জন্য বেছে নিতে পারেন এই রিসোর্ট।
খোলা পরিবেশ ও বিশেষ পরিষেবার জন্য জনপ্রিয় ঢাকা রিসোর্ট। রিসোর্টটিতে বড়দের জন্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলার মাঠ রয়েছে। গাছের ছায়ায় পুকুরের ধারে বসে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। রিসোর্টটিকে বিশিষ্ট করেছে রসনাবিলাসের জন্য দেশি-বিদেশি খাবারের বিশেষ সম্ভার। ঢাকার খুব কাছেই মানিকগঞ্জে ঢাকা রিসোর্টের অবস্থান।
ঢাকার পড়শি কেরানীঞ্জে রয়েছে একাধিক ঘোরার জায়গা। চাইলে ঈদের ছুটিতে এক দিনেই ঘুরে আসা যায় বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ ধরে পৌঁছে যেতে পারেন কেরানীগঞ্জের সারিঘাটে। মূলত আইন্তা ও আড়াকুল গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খালের অংশবিশেষ সারিঘাট এলাকা নামে পরিচিতি পেয়েছে। খালের পাশ দিয়ে সারি ধরে দাঁড়িয়ে আছে কড়ইগাছ। খালের পানিতে কায়াকিং ও নৌভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। আপনার রসনাতৃপ্তিতে এলাকাজুড়ে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে।
কেরানীগঞ্জের ছিপছিপে নদী কালীগঙ্গা দেখতে চাইলে যেতে হবে হজরতপুরে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে হজরতপুরের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। অটোরিকশা রিজার্ভ করে হজরতপুরের ঢালিকান্দী, পাড়াগ্রাম ও মধুরচরে যাওয়া যায়। এসব এলাকা থেকে কালীগঙ্গার স্নিগ্ধ রূপ দেখতে পারেন। হজরতপুর ঘাট থেকে কালীগঙ্গায় নৌকাভ্রমণের সুব্যবস্থা রয়েছে। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ভাড়া নিয়ে কালীগঙ্গায় সারা দিন ঘুরে বেড়ান ইচ্ছেমতো।
সর্পিলাকৃতির ধলেশ্বরী দেখতে চাইলে যেতে হবে কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা এলাকায়। বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন সৈয়দপুর খেয়াঘাট থেকে ধলেশ্বরী নদীর তীরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। সৈয়দপুর খেয়াঘাটে খেয়ানৌকার পাশাপাশি ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ধলেশ্বরী নদী ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে।
মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা সেন্টার স্টেশনে নামলেই চোখে পড়বে বিস্তৃত খোলা মাঠ। এটিই দিয়াবাড়ি। এই মাঠে গড়ে উঠেছে এক থেকে দেড় শ অস্থায়ী খাবারের দোকান। চা, চপ, শিঙাড়া থেকে সামুদ্রিক মাছ—কী নেই এসব দোকানে! ভোজনের পাশাপাশি হেঁটে ঘুরতে পারেন পুরো এলাকা। দিয়াবাড়িতে রয়েছে ভাসমান রেস্তোরাঁ। রয়েছে জলাশয়। লেকের পানিতে ঘুরতে পারেন কায়াক নিয়ে।
আপনার শহুরে কিশোরটি কি রং ঝিলমিল বিল-ঘাট দেখেছে? রহস্যে ঘেরা জমিদারবাড়ির গল্প শুনে বড় হওয়া আপনার সন্তানকে ছুটিতে বিল-ঘাট ও জমিদারবাড়ি থেকে ঘুরিয়ে আনতে পারেন।
ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাটের অবস্থান। ঘাটটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ চর। পথে পড়বে লক্ষ্মীপ্রাসাদ, জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আন্ধার কোঠার মতো দর্শনীয় স্থান। পরিবারসহ দিনব্যাপী ঘুরেফিরে ঘাটে সূর্যাস্ত দেখার দারুণ অভিজ্ঞতা নিতে পারেন এই ঈদে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জমিদারবাড়িগুলোর একটি বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। জমিদার গোবিন্দ রাম সাহা বানিয়েছিলেন বাড়িটি। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে এটি অবস্থিত। প্রায় ছয় একর জমির ওপর বিস্তৃত জমিদারবাড়িটিতে রয়েছে দক্ষিণমুখী সাতটি স্থাপনা। এসব স্থাপনায় বিভিন্ন আকৃতির কক্ষ রয়েছে দুই শতাধিক। জমিদারবাড়ির প্রবেশপথ চারটি। প্রতিটিতে অর্ধবৃত্তাকার খিলান আকৃতির সিংহ খোদাই করা তোরণ বিদ্যমান। জমিদারবাড়ির ভবনগুলো কারুকার্যময়। চারটি স্থাপনা কিছুটা গথিক স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের চালচিত্র বহন করছে। জাদুঘরের নিচতলায় রয়েছে ১৫টি লোহার সিন্দুক। আঠারো শতকে নির্মিত এসব সিন্দুক মূল্যবান দ্রব্য রাখার কাজে ব্যবহার করতেন জমিদারেরা।
ঢেউহীন পানির রাজ্যে জলজ পাখির ওড়াউড়ি আর সদ্য ফোটা শাপলা ফুল দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আড়িয়ল বিল। ঢাকা থেকে আড়িয়ল বিল এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ‘ইলিশ’ গাড়িতে করে মাওয়া ফেরিঘাটের দিকে রওনা দেবেন। মাঝপথে শ্রীনগরের ভেজবাজারে নেমে পড়বেন। ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা। একটা ট্রলার দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় সারা দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসুন আড়িয়ল বিল থেকে।
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ১০০টি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক শহরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর একটি বাংলাদেশে অবস্থিত। নাম তার পানাম নগর। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এটি অবস্থিত। কয়েক শতাব্দী পুরোনো নগরটির ৫২টি ভবন এখনো টিকে আছে। এসব বাড়ির স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মোগল আমলের শিল্পরীতির মিশ্রণ রয়েছে। বাড়িগুলোর ইটের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ঢালাই লোহার তৈরি ব্র্যাকেট ভেন্টিলেটর ও জানালার গ্রিল। মেঝেতে রয়েছে লাল, সাদা, কালো মোজাইকের কারুকাজ। অধিকাংশ বাড়িতে খিলান, ছাদ ও মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে নীল ও সাদা মোজাইকের কাজ। প্রতিটি বাড়িতেই আছে কূপ। ভবনগুলোয় জড়িয়ে রয়েছে বাংলার সমৃদ্ধ অতীতের স্মৃতি। ২০০৩ সালে পানাম নগরকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে গেজেটভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার। প্রায় দেড় হাজার বছরের প্রাচীন শহর সোনারগাঁ ছিল বাংলার অন্যতম রাজধানী। বার ভূঁইয়ার আমলেও বাংলার রাজধানী ছিল পানাম নগর। ঈদের ছুটিতে ‘হারানো নগরী’ হতে পারে আপনার বিশেষ গন্তব্য।