আল মাহমুদের কবিতার নতুন ভাব ও ভাষা বাংলাদেশের সাহিত্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্য সৃষ্টিতে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। সেই সঙ্গে আল মাহমুদের কবিতায় দেশের আর্থসামাজিক রূপান্তর, নদীকেন্দ্রিক জনপদ, চরাঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লৌকিক দর্শন ও সংস্কার, স্বাদেশিকতা ও রাজনৈতিক চৈতন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলেও মূল্যায়ন করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে আল মাহমুদ স্মরণে বাংলা একাডেমি আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এই মূল্যায়ন করা হয়। ১১ জুলাই ছিল কবি আল মাহমুদের জন্মদিন। এই উপলক্ষে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কবি ও গবেষক ফজলুল হক। আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও কবি আবদুল হাই শিকদার, প্রাবন্ধিক ও শিশুসাহিত্যিক জাকির আবু জাফর এবং কবি হিজল জোবায়ের। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
‘দেশজ আধুনিকতা ও আল মাহমুদের কবিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে ফজলুল হক বলেন, কবিতায় গ্রামীণ জীবনকাঠামো ও সংস্কৃতি, চাষি, জমিন, বলদ, লাঙল, মাঝি, নৌকা, নদী ভাঙন—এসব কবি আল মাহমুদের চেতনায় উজ্জ্বল হয়েছে। সাধারণ মানুষ, অপরূপ প্রকৃতি তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। এদের মাঝ থেকে তিনি স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী। এটাই কবির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ঔপনিবেশিক প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে আল মাহমুদ দেশজ আধুনিকতার নিরিখে নিজস্ব কল্পচিত্র, মত ও পথ নির্মাণ করেছেন।
আলোচনায় আবদুল হাই শিকদার বলেন, আল মাহমুদ আমাদের আত্মপরিচয়ের সংকট দূর করেছেন। তাঁকে হারিয়ে আমরা দরিদ্র হয়েছি। নিঃস্ব হয়েছি। তিনি পশ্চিমা আধুনিকতার ছাঁচে ঢালা মানুষ হতে চাননি। তিনি কালের ক্ষোভ ও ক্রন্দনকে তাঁর রচনায় ধারণ করে কালোত্তীর্ণ হয়েছেন।
জাকির আবু জাফর বলেন, দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষকে দেখেছেন আল মাহমুদ। কবির কাজ জাতিকে স্বপ্ন দেখানো। তিনি একটি মানবিক ও সুষম সমাজের স্বপ্নের কথা বলেছেন। হিজল জোবায়ের বলেন, আল মাহমুদ লোকজ উপাদানের মধ্যে সামগ্রিক জীবনদর্শনের অনুসন্ধান করেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘আল মাহমুদ আমাদের জাতীয়তাবাদের উত্থান পর্বের শ্রেষ্ঠ কবি ও শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষ্যকার। তাঁর নামে বাংলা একাডেমির কোনো একটি স্থাপনার নামকরণ করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে।’