
দাবি আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ রোববার এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে এ আন্দোলনকে পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক উল্লেখ করে সরকার বলেছে, এটি জাতীয় স্বার্থ ও নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থী। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা (এসেনশিয়াল সার্ভিস) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের বিবৃতিতে অনতিবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।
এখন অনেকের জিজ্ঞাসা, অত্যাবশ্যক পরিষেবা কী। এর ফলে কী হয়, কী করা যায় বা করা যায় না। এ বিষয়ে একটি আইন আছে। অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩ নামের এ আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ১৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা রয়েছে। যেমন ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ই-কমার্স ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয় এবং এ–সংক্রান্ত স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ কাজ, স্থল, রেল, জল বা আকাশপথে যাত্রী বা পণ্য পরিবহন, স্থলবন্দর, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস, স্থানান্তরসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর বা বন্দরসম্পর্কিত পরিষেবা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি–সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা, ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়সহ এ–সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসম্পর্কিত পরিষেবা ইত্যাদি।
এই ১৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে এখন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকেও অত্যাবশ্যক পরিষেবা করার সিদ্ধান্ত জানাল সরকার।
জানতে চাইলে চাকরিসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পরিষেবাকে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। তাতে ওই পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্মবিরতি বা আন্দোলন করা যায় না। করলে জেল-জরিমানার বিধান আছে।
কী আছে আইনে
আইন অনুযায়ী সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে কোনো চাকরি বা কোনো শ্রেণির চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পরিষেবাকে অত্যবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। কখন সেটি করতে পারবে, তা–ও বলা আছে এ আইনে। যেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এমন পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করা যাবে। এ ছাড়া জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে; জনগণের জন্য অসহনীয় কষ্টের কারণ হচ্ছে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমগ্র দেশ বা এর কোনো অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় হলে অত্যবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করা যাবে।
এ ধরনের ঘোষণা সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে প্রয়োজনে এ মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো যাবে। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার চাকরি অর্থ বাংলাদেশের ভেতরে বা বাইরে বেতনসহ বা অবৈতনিক, দৈনিক ভিত্তিতে, ধার্য করা ফি বা সম্মানীভুক্ত চাকরিকে বোঝাবে।
অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষিত চাকরির ক্ষেত্রে সরকার ওই চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকা বা এলাকাগুলো ত্যাগ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আদেশ দিতে পারবে।
আইন অনুযায়ী, কোনো ধর্মঘট নিষিদ্ধ করা আবশ্যক বিবেচনা করলে সাধারণ বা বিশেষ আদেশ দিয়ে এক বা একাধিক অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে সরকার।
সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেলে কী ধরনের শাস্তি দেওয়া যায়, তা–ও বলা আছে আইনে। চাকরিরত কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করতে বা চলমান রাখতে পারবেন না। কোনো প্রতিষ্ঠানে লকআউট বা লে-অফ ঘোষণা করা যাবে না। এ আদেশ অমান্য করলে অথবা অমান্য করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে প্ররোচিত করলে অথবা কাজ করতে বা কাজ চলমান রাখতে অস্বীকার করলে অথবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকলে বা চাকরি থেকে পরিত্যাগ করলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
অপরাধ অনুযায়ী, ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে আইনে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে। এ ছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থারও সুযোগ আছে আইনে।