
সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার ডেলটা ধরনের মতোই গুরুতর সংক্রমণ তৈরি করতে পারে অমিক্রন (এ গবেষণাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রকাশ হয়নি)। ইতিমধ্যে করোনার অমিক্রন ধরনের বিএ.১ ও বিএ.২–সহ কয়েকটি উপধরন শনাক্ত করার কথা বলেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বলা হচ্ছে, বিএ.২ উপধরনটি বিএ.১ উপধরনের চেয়ে দ্রুত ছড়ায়। যদিও অমিক্রনের নতুন শনাক্ত বিএ.২ উপধরনটি মানুষের শরীরের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর উপসর্গ, তীব্রতা ও অন্য গুরুতর বিষয়গুলো নিয়ে জানতে একের পর এক গবেষণা চলছে। সবকিছু মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম লাইভমিন্ট।
যুক্তরাজ্যে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বিএ.২ উপধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্ত্র সমস্যার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। জেডওই কোভিড সিম্পটম স্টাডির জরিপেও তেমন আভাস পাওয়া গেছে। জেডওই কোভিড সিম্পটম স্টাডি হলো করোনার উপসর্গ নির্ণয়ে গবেষণামূলক মোবাইল অ্যাপ, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাঁদের উপসর্গ নিয়ে তথ্য দিয়ে থাকেন। এ গবেষণা সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক টিম স্পেকটর সংবাদমাধ্যম দ্য সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা জানি, ভাইরাসটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘোরাফেরা করে। হতে পারে অমিক্রন কিংবা অন্য কোনো ধরন মানুষের অন্ত্রে আক্রমণ করছে। কিন্তু নাকে এর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে হয়তো কারও অন্ত্রে সংক্রমণ হচ্ছে কিন্তু করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসছে না।’
আক্রান্ত ব্যক্তিরা ছয় ধরনের অন্ত্র–সম্পর্কিত অসুস্থতায় ভোগার কথা বলেছেন। এগুলো হলো—বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া করা, পেট ফাঁপা। এর আগে জেডওই কোভিড অ্যাপের গবেষণায় ডায়রিয়াকে কোভিডের উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে তখন বলা হয়েছিল, এ উপসর্গটি কম মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
জেডওই-এর গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘ডায়রিয়া, খেতে না পারা এবং পেট ব্যথার মতো অন্ত্র–সম্পর্কিত কিছু উপসর্গ বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি আমরা। এগুলো নিয়ে আমরা এখনো পর্যালোচনা করছি। করোনার আগের ধরনগুলোর ক্ষেত্রেও এ উপসর্গগুলো ছিল। সুতরাং অমিক্রন সংক্রমণের সঙ্গে এ উপসর্গগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।’
এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তিরা ২৫টির মতো উপসর্গ দেখা দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন। সেগুলো হলো—জ্বর কিংবা শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, পেশি বা শরীরের ব্যথা, মাথা ব্যথা, নতুন করে স্বাদ বা গন্ধ চলে যাওয়া, গলা ব্যথা কিংবা কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া, ডায়রিয়া, উচ্চ তাপমাত্রা, টানা কাশি হওয়া, পিঠে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, মানসিক জটিলতা, বুক জ্বালাপোড়া করা, পেট ফাঁপা, স্লিপ প্যারালাইসিস (ব্যক্তির মনে হয় তিনি জেগে আছেন কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য চলাফেরা করতে বা কথা বলতে পারেন না), ত্বকে দানা দানা হওয়া, রাতে ঘামা, জিবে প্রদাহ, হাত ও পায়ের আঙুল ফুলে যাওয়া ও বিবর্ণ হওয়া, বুকে ব্যথা, পেট ব্যথা।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, টিকা নেওয়া এবং পূর্ববর্তী করোনা সংক্রমণের মধ্য দিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করায় অমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা বলছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, অমিক্রনের বিএ.২ উপধরনটি নিশ্চিতভাবেই বিএ.১ এর তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। তবে দুই উপধরনই সমপর্যায়ে মারাত্মক। ভবিষ্যতে অমিক্রনের আরও একটি ঢেউ এলে তখন বিএ.২ এর আরও অনেক সংক্রমণ দেখা যাবে।
সংস্থাটি আরও সতর্ক করেছে, অমিক্রন মৃদু নয়, তবে এটি ডেলটার চেয়ে মৃদু মাত্রার।