প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে আগ্রহী বেইজিং

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
ফাইল ছবি

চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীন সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বেইজিং। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে অতিথি করতে চায় চীন। কিন্তু ওই সময়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন বলে তিনি চীনে যেতে পারছেন না। তাই সুবিধাজনক সময়ে সফরটি আয়োজনের জন্য দুই দেশ কাজ করবে।

রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চীনের ভাইস মিনিস্টার। পরে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, চীনের ভাইস মিনিস্টারের সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রসঙ্গটি এসেছে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের জন্য একটি আমন্ত্রণপত্র এনেছিলেন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে থাকার কারণে চীনে যেতে পারবেন না। তাই এ বছরের সুবিধাজনক কোনো এক সময়ে সফর আয়োজনের জন্য তাঁরা কাজ করবেন।

* প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চীনের ভাইস মিনিস্টারের সৌজন্য সাক্ষাৎ* দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর চীনের

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের হাংঝুয়ে শহরে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো কথা রয়েছে। চীন ওই সফরের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে আগ্রহী।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সর্বশেষ চীন সফর করেছিলেন। সেবার বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর করেন। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফরে যাবেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে চলতি বছরেই প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিপক্ষীয় সফরে নেওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে বেইজিং।

মূল মনোযোগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে

রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পাশাপাশি তা পুরো এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করা জরুরি মনে করছে চীন। শনিবার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশেষ গুরুত্ব দেন চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং। এমনকি প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবেরা আলাদাভাবে আরেকটি বৈঠক করেন। ওই আলোচনায় একাধিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম ছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গটি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাস দিয়েছে, এবারের বাংলাদেশ সফরে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও চীনের ভাইস মিনিস্টারের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টি। কয়েক মাস ধরে তারা এ বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এ বিষয়টি সুরাহার জন্য চীন এগিয়ে এসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহায়তা করছে। তাই পাইলট প্রকল্পের আওতায় কীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে আলোচনা

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে সফরে এসেছিলেন। দুই দেশের সম্পর্ককে ‘উন্নয়ন সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করা হয়েছিল। এর পাশাপাশি ঐতিহাসিক ওই সফরে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, যোগাযোগ অবকাঠামো, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত ২৭টি প্রকল্পে চীন ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই ২৭ প্রকল্পের বাস্তবায়ন খুব শ্লথ। এ নিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার অনুরোধ জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, রোববারপররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সঙ্গে চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের আলোচনায় ওই ২৭ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রসঙ্গটি এসেছে। এ সময় তাঁরা প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।