সরকারি আইন লঙ্ঘন করে চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মেঘনা ও ধনাগোদা নদীসহ খাল-বিল ও জলাশয়ে কারেন্ট জাল অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে জাটকা, ডিমওয়ালা, পোনা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী অকালে মারা যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, মৎস্য বিভাগ যথাযথভাবে তদারকি ও অভিযান না চালানোর কারণে জেলেরা ওই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধ করেনি। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত শুক্রবার মেঘনা নদীর মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, এখলাশপুর, শিকিরচর, মোহনপুর ও আমিরাবাদ এবং ধনাগোদা নদীর মতলব দক্ষিণ উপজেলার গাজীপুর, বাইশপুর, মাছুয়াখাল, এনায়েতনগর ও নায়েরগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জেলেরা কারেন্ট জাল পেতে মাছ ধরছেন। কারেন্ট জালে বড় মাছের পাশাপাশি ধরা পড়ছে জাটকা এবং পাঙাশ, রুই, কাতল ও আইড় মাছের পোনা। এ ছাড়া এ জালে ডিমওয়ালা পুঁটি, ট্যাংরা, বজুরি, কই, পাবদা, ঢেলা ও বাইলা মাছ; ব্যাঙ, সাপ ও কুঁচেসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীও আটকা পড়ছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার বলেন, ২০০২ সালে সরকারের জারি করা মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের ৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কারেন্ট জালের উৎপাদন, বুনন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, বহন, মালিক হতে বা ব্যবহার করতে পারবেন না। আইন ভঙ্গ করে যিনি কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরবেন, তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা এক থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাইশপুর এলাকার জেলে দিলীপ কুমার বলেন, কারেন্ট জাল সহজে পরিবহনযোগ্য ও দাম কম। এতে মাছ ধরা পড়ে বেশি। এ জন্য এ জালে মাছ ধরছেন।
এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ এলাকার জেলে প্রিয়লাল বলেন, কারেন্ট জালে মাছ ধরা নিষেধ, সেটা জানেন। তবু এই জাল পাতেন। নিষেধাজ্ঞা মানলে পেটে খাবার জুটবে না।
মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই উপজেলায় অন্তত ১২ হাজার জেলে সারা বছর কারেন্ট জাল দিয়ে নদী, খাল-বিল ও জলাশয়ে মাছ ধরছেন। গড়ে প্রতি দিন চার-পাঁচ শ জেলে কারেন্ট জাল ফেলছেন।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ওমর আলী প্রধানিয়া দাবি করেন, তাঁর উপজেলায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ টন মাছ ধরা হচ্ছে। বেশির ভাগ মাছই শিকার হচ্ছে কারেন্ট জালে। এর ৬০-৬৫ শতাংশই জাটকা, দেশি জাতের ডিমওয়ালা মাছ ও মা ইলিশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন মৎস্য গবেষক বলেন, কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ না হলে দেশি জাতের মাছ টিকবে না। বিপন্ন হবে সাপ ও ব্যাঙসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর জীবন। বিনষ্ট হবে জলজ জীববৈচিত্র্য। তিনি অভিযোগ করে বলনে, প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের লোকজনের উদাসীনতায় কারেন্ট জালের ব্যবহার বাড়ছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান দাবি করেন, কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধে সারা বছর অভিযান চালানো হয়। গত মার্চ ও এপ্রিলে মেঘনায় ৩৮৫টি অভিযান চালানো হয়। এ সময়ে দেড় কোটি বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ২০০ জেলেকে কারাদণ্ড ও ৪০ জন জেলেকে জরিমানা করা হয়।