Thank you for trying Sticky AMP!!

ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে সহকারী কমিশনারের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ৫ হাজার ইয়াবা চুরি, কনস্টেবলের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন সহকারী কমিশনারের (এসি) অফিসের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ৫ হাজার পিছ ইয়াবা চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ঢাকার ডিবি অফিসে কর্মরত একজন কনস্টেবলের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেছে পুলিশ। মামলার পর ওই পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের নাম সোহেল রানা। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার কাকনা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম জিন্নাত আলী। সোহেল রানাকে আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। সোহেল এখন কারাগারে আছেন।

প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী ও পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহাবুদ্দিন খলিফা। ডিবির অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পেশাদার খুনি দমন টিমে (পশ্চিম বিভাগ) কর্মরত আছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ এবং মামলার কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এক ব্যক্তি মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ের পুকুরপাড়ে আসেন। এরপর ওই ব্যক্তি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পেশাদার খুনি দমন টিমের (ডিবি পশ্চিম) অফিস কক্ষের সামনে আসেন। রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে ইয়াবাভর্তি ব্যাগ নিয়ে ডিবি অফিসের প্রধান ফটকে যান সেই ব্যক্তি। এরপর লোকটি রিকশায় করে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণির দিকে চলে যান। পরদিন শনিবার সকাল সাতটার সময় ডিবির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবু সুফিয়ান প্রধান গেটে দায়িত্ব পালনের জন্য আসেন। অফিস থেকে ডিবির জ্যাকেট নেওয়ার জন্য সহকর্মী ফারুকের কাছ থেকে চাবি নেন তিনি। পরে অফিসে গিয়ে আবু সুফিয়ান দেখেন, দরজার সামনের বারান্দার সিলিং এবং ভেতরের দক্ষিণ কোণের সিলিং খোলা। এমন অবস্থা দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ডিবির সহকারী কমিশনার মজিবর রহমানকে মুঠোফোনে এই ঘটনা জানান। পরে কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, মজিবর রহমানের কক্ষের থাই অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি দরজা ও তিনটি ড্রয়ারের তালা ভাঙা।

মামলার কাগজপত্র সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় ড্রয়ারে একটি মাদক মামলার আলামত হিসেবে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা রাখা ছিল, যার দাম আনুমানিক ১০ লাখ টাকা। পলিথিনের ব্যাগে রাখা ওই ইয়াবা চুরি হয়। তখন বিষয়টি ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এরপর ইয়াবাচোর ধরার জন্য ডিবি অফিসের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। ডিবিতে কর্মরত সদস্যদের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হলে ঘটনার দিন রাতে ঢোকা ওই ব্যক্তি কনস্টেবল সোহেল রানা বলে শনাক্ত হয়। পরে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানাকে ডেকে আনা হয়। দেখানো হয় ডিবি অফিসের ভিডিও ফুটেজ।

ইয়াবা চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির পরিদর্শক অশোক কুমার সিংহ আজ বুধবার আদালতকে এক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনস্টেবল সোহেল রানা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে তিনিই সেদিন রাতে ডিবি অফিসে ঢোকেন এবং সহকারী কমিশনারের অফিসের ড্রয়ারের তালা ভেঙে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা চুরি করেন। চুরি করা এসব ইয়াবা গেন্ডারিয়া থানার একটি মাদক মামলার আলামত। পরে ওই ইয়াবাগুলো সোহেল রানার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। সোহেলের বাসায় খাটের জাজিমের নিচে ওই ইয়াবা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি স্ক্রু ড্রাইভারও সোহেলের বাসায় পাওয়া যায়।

এই মামলার বাদী ও পুলিশ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খলিফা বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা ডিবি অফিসের সহকারী কমিশনারের ড্রয়ারের তালা ভেঙে পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা চুরি করেন। ওই ইয়াবাগুলো ছিল গেন্ডারিয়া থানার একটি মাদক মামলার আলামত।

ওই মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হলেন শাহাবুদ্দিন খলিফা। তিনি বলছেন, গত ৩০ জুলাই গেন্ডারিয়া থানায় ওই মাদক মামলা হয়। চারজন আসামির কাছ থেকে ওই পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। আদালতে আলামত ধ্বংসের আবেদন করা হয়েছে। অনুমতি পেলে ইয়াবাগুলো আদালতে পাঠানো হবে।

শাহাবুদ্দিন খলিফা আরও বলেন, পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা ডিবি অফিসে কয়েক বছর ধরে কর্মরত আছেন। জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিকে তিনি ইয়াবা চুরির কথা স্বীকার করছিলেন না। একপর্যায়ে ইয়াবা চুরির করার কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই পরে চুরি করা ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ১৮ বছর ধরে সোহেল রানা কনস্টেবল হিসেবে চাকরি করছিলেন।