Thank you for trying Sticky AMP!!

তালতলার বাসিন্দারা উজ্জ্বলের দাপটে অতিষ্ঠ

শেরে বাংলানগর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান উজ্জ্বল

শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাশফিকুর রহমান ওরফে উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখল, মন্দির ও গণপূর্তের জমি দখল, চাঁদাবাজি, চাঁদার জন্য হুমকি দেওয়া, মাদক ব্যবসা, জুয়ার কারবার—সবই করেন তিনি। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ আগারগাঁও তালতলার বাসিন্দারা।

পুলিশের খাতায় উজ্জ্বল সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি, চাঁদাবাজি, নারী ও শিশু নির্যাতনেরও একাধিক মামলা আছে। এর মধ্যে শেরেবাংলা নগর থানায় হুমকি ও নারী নির্যাতনের তিন মামলায় তিনি জামিনে আছেন। আর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় করা একটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। এর বাইরেও এলাকার মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নানা আবেদন–নিবেদন করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। উজ্জ্বলের আছে একটি মোটরসাইকেল বাহিনী। তারা দিনরাত এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়।

সরকারি দলের পরিচয় থাকায় উজ্জ্বলের এসব কর্মকাণ্ড পুলিশ জানলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানে আলম মুনশি প্রথম আলোকে বলেন, উজ্জ্বল ভালো লোক নন। তবে তিনি প্রকাশ্যে আসেন না, তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদেরও দেখা যায় না। উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে বলেও জানান তিনি।

পশ্চিম কাফরুলের মোল্লাপাড়া তিনতলা মসজিদের উল্টো পাশে আব্দুল হালিম আকন্দ, জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩৩ জনে মিলে পশ্চিম কাফরুলে ৭ দশমিক ৪২ কাঠার জমি কেনেন ২০১৮ সালে। জায়গার নামজারি, ডিসিআর, খাজনা, পরচা ও সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং নম্বর—সব আছে সেই ৩৩ মালিকের নামে। কিন্তু উজ্জ্বল ওই জমি দখল করে জমির মালিকদের কাছে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে নিজের দখলে রেখে প্রতি মাসে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা ঘরভাড়া তুলছেন।

এলাকার লোকজন জানান, এই জায়গা দখল করার জন্য চার ব্যক্তিকে ভুয়া মালিক সাজিয়ে জাল বায়নানামা দলিল করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের তদন্তে বায়নানামাটি জাল বলে প্রমাণিত হয়।

যাঁদের নামে বায়না দলিল হয়েছিল, তাঁদের একজন শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উজ্জ্বল আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে।’

এই জমির মালিকদের একজন আব্দুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উজ্জ্বল আমাদের কাছে দুই কোটি চাঁদা চাইছে। চাঁদা না দিলে জমি দেবে না বলে জানিয়েছে।’ আরেক মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিটা কেনার পর উত্তরায় ভূমি অফিসে নামজারির সময় উজ্জ্বলের দলবল সেখানে হামলা চালায়।’

উজ্জ্বলের দখল এখানেই শেষ নয়। আগারগাঁও তালতলার সর্বজনীন পূজা মন্দিরের জায়গা দখল করে সেখানে গুদামঘর বানিয়েছেন। ঘরটি ডেকোরেটরের কাছে ভাড়া দেওয়া। মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, গণপূর্তের প্রায় ৯ কাঠা জায়গায় মন্দির, এর ২ কাঠা জায়গা দখল করে ঘর বানিয়েছেন উজ্জ্বল। এখন ভয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না।

মন্দির কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অখিল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, মন্দিরের সীমানায় ডেকোরেটরের গুদাম থাকায় তাঁরা নিরাপত্তাঝুঁকিতে আছেন; কিন্তু ভয়ে তাঁরা গুদাম সরাতে পারছেন না।

অভিযোগ আছে, এলাকায় কোনো ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলেই সেখানে হাজির হয় উজ্জ্বলের মোটরসাইকেল বাহিনী। এরপর কাজের ধরন দেখে তারা চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মোল্লাপাড়ার এক ঠিকাদার বলেন, সম্প্রতি মোল্লাপাড়া মসজিদের পশ্চিমে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেন উজ্জ্বল। তিনি ঢালাইশ্রমিকদের মারধর করেন এবং ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ভবনমালিক বিষয়টি সমাধান করেন।

গণপূর্তের আবাসিক এলাকায় বি-৪ ভবনের পেছনের অংশে খালি জায়গায় একটি আধা পাকা এবং একাধিক টিনের ঘর আছে। আধা পাকা ঘরটিতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শেরেবাংলা নগর থানা কমান্ডের সাইনবোর্ড ঝোলানো। উজ্জ্বলের লোকেরা ওই ঘরে প্রতি রাতে মাদক ও জুয়ার আসর বসায় বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান।

তালতলা বাসস্ট্যান্ডে শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি কার্যালয় আছে। সেখানে মাঝেমধ্যে বসেন উজ্জ্বল। আর তাঁর লোকেরা রাস্তার দুই পাশে অর্ধশতাধিক দোকান থেকে চাঁদা তুলে নেয়।

শুধু তা–ই নয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের খালি জায়গায় বস্তি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন উজ্জ্বল। তালতলায় গণপূর্তের গুদাম-১–এর জায়গায় অর্ধশতাধিক বস্তিঘর থেকে ভাড়া আদায় করেন উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ সহকারী জ্যাকির বাবা গিয়াস উদ্দিন।

এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উজ্জ্বল ও তাঁর বড় ভাই মাসুদ চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। তাঁদের মাও একজন মাদক বিক্রেতা। মাদক ব্যবসার মামলায় উজ্জ্বলের মা সাত বছর জেল খেটেছেন। উজ্জ্বলের সহযোগীদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদে চাকরির সময় সোনা চোরাচালানের মামলায় চাকরিচ্যুত হন। আরেক সহকারী দীন ইসলাম জাল দলিলের কারবারে জড়িত। এ ছাড়া বুলেট রুবেল, মালা, ইউনুস, ইসমাইল, মাসুদ ও সজীব মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। সাইফুল ইসলাম মোল্লা উজ্জ্বলের দেহরক্ষী এবং বিভিন্ন জায়গায় মাদক পৌঁছানোর কাজ করেন।

পশ্চিম কাফরুল ২ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মোয়াজ্জেম আলী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে উজ্জ্বলের চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ে লিখিত আবেদন করেছিলেন, কিন্তু কিছুই হয়নি।

এত অভিযোগের বিষয়ে উজ্জ্বলের বক্তব্য জানতে তাঁর তালতলা বাসস্ট্যান্ড কার্যালয়ে একাধিকবার গিয়েও তাঁকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোন সংযোগে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠানোর পর তিনি ফোন বন্ধ করে দেন।