দৌলতখানে দরবার শরিফে হামলা অগ্নিসংযোগ

>গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর দরবার শরিফ ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় মিয়ারহাট ইমান-আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটি

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় বাংলাদেশ হাক্কানি মিশনের মিয়ারহাট দরবার শরিফে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

মিয়ারহাট ইমান-আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির অভিযোগ, গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকা থেকে আসা হাক্কানি মিশনের চার শতাধিক নারী-পুরুষ দরবারে ঢোল বাজিয়ে নাচ-গান করেন। এতে স্থানীয় মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায় ব্যাহত হয়। দরবার শরিফের এসব কর্মকাণ্ড ইসলাম ও শরিয়তবিরোধী আখ্যা দিয়ে কমিটি আন্দোলনের ডাক দেয়। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর দরবার শরিফ ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে গত শুক্রবার বিকেলে দরবার শরিফের পাশের একটি মাঠে কয়েক হাজার মুসল্লি সমবেত হন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন সেখানে যান। এ সময় মুঠোফোনে ভোলা-২ আসনের সাংসদ আলী আজম আন্দোলনকারীদের দাবি মানার আশ্বাস দেন। প্রশাসনও একই আশ্বাস দেয়। আশ্বাস পেয়ে কমিটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে। এর মধ্যে দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধ না করলে আগামী ৪ মার্চ আবারও ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে মুসল্লিরা বাড়ি ফিরে যান।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন মাগরিবের নামাজের আগে আগে শত শত মানুষ দরবার শরিফে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা দরবারের চারপাশে অগ্নিসংযোগ করে। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশের সদস্যরা আগুন নেভান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গতকাল শনিবার জানতে চাইলে হাক্কানি মিশনের দৌলতখান দরবারের প্রধান জোবায়ের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। কিন্তু ইমান-আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাঁদের উৎখাতের চেষ্টা করছেন। এ উদ্দেশ্যে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার মাগরিবের নামাজের আগে কয়েক হাজার মানুষ দরবার শরিফে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে তিনি ছাড়াও তাঁদের পক্ষের আটজন আহত হন।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, দরবার শরিফের ফটকের কাছে ইট ও লাঠিসোঁটা পড়ে আছে। ভেতরে ইটের টুকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। হাঁস-মুরগির খামারে ভাঙচুরের চিহ্ন। অসংখ্য গাছ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুকুরে ড্রামের ওপর বসানো জলটুঙ্গি আগুনে পোড়ানো হয়েছে। একটি মোটরসাইকেল দুমড়ানো-মোচড়ানো।
জেলা প্রশাসক মোহাং সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পর দুষ্কৃতকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হাক্কানি মিশন আঞ্চলিক পরিচালনা কমিটির সভাপতি দৌলতখান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি দলীয় নিষেধ উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। তারপর থেকে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ আমার বিরোধিতা করছে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার জন্য পক্ষটি আমার ও দরবারের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতখান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনজুর আলম খান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ইটের আঘাতে আহত হয়েছি। এখন আমার বিরুদ্ধেই বদনাম ছড়ানো হচ্ছে।’ জেলা ইমান-আক্বিদা সংরক্ষণ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ঘটনা ঘটিয়েছে অথবা দরবারের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়ে তাঁদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। দৌলতখান থানার ওসি এনায়েত হোসেন বলেন, হামলায় দুজন এসআই ও পাঁচজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ হাজার লোকের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে।