Thank you for trying Sticky AMP!!

নাটোরে ইটভাটার শ্রমিককে শিকলে বেঁধে নির্যাতন

নাটোরে রাম বসাক নামে ইটভাটা শ্রমিককে ইটভাটার কক্ষে শেকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের গুরুদাসপুরে রাম বসাক (৩৫) নামে এক ইটভাটা শ্রমিককে শিকলে বেঁধে তিন ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের তির উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের মেসার্স এএসবি ব্রিকস নামের ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রহিম মোল্লার ছেলে মো. আলমগীর হোসেন ও তাঁর ভাতিজা ছাবলু মোল্লা যৌথভাবে ইটভাটাটি পরিচালনা করেন। নির্যাতনের শিকার রাম বসাকের বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে।

আজ শনিবার সকালে রাম বসাকের বাবা ছুটু বসাক ছেলেকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে দুপুরে রাম বসাককে শিকল বাঁধা অবস্থায় ওই ইটভাটা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ইটভাটার ব্যবস্থাপক স্বপনকে (৩০) আটক করে পুলিশ।

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাহারুল ইসলাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় মো. আলমগীর হোসেন ও ছাবলু মোল্লাকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। একই সঙ্গে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার রাম বসাকের অভিযোগ, তিনি তাদের গ্রামের সেরাজুল ইসলামের মাধ্যমে ইটভাটায় কাঁচা ইট বানানোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে এখানে আসেন। কিন্তু ইটভাটা মালিকের ছেলে আলমগীর হোসেন ও ভাতিজা ছাবলু মোল্লার অমানবিক নির্যাতনের কারণে এখানে কাজ করা প্রায় ৪০ জন শ্রমিক পালিয়ে যান। তিনি একা হয়ে পড়ায় গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে বাড়ি যাচ্ছিলেন। আলমগীর ও ছাবলু মোল্লা উপজেলার বিলশা এলাকা থেকে তাঁকে ধরে আনেন। তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের পর ইটভাটার একটি কক্ষে শেকল দিয়ে বেঁধে ক্ষণে ক্ষণে নির্যাতন করা হয় তাঁর ওপর। ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয়নি তাঁকে।

রাম বসাক বলেন, চার মাস আগে শ্রমিক সর্দার সেরাজুল ইসলামের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন তিনি। দুই মাসের মাথায় মজুরি থেকে ওই টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তারপরও তাঁকে শেকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে দাবি করে তিনি ন্যায়বিচার দাবি করেন।

ইটভাটায় কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের ভাষ্য, ইটভাটায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করতেন। মালিক পক্ষের লোকজন তাদের জিম্মি করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কঠোর শ্রমে বাধ্য করতেন। অমানবিক শ্রম ও নির্যাতন সইতে না পেরে অনেকে পালিয়ে যান। রাম বসাক সহজ-সরল হওয়ায় তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

রাম বসাকের বাবা ছুটু বসাক বলেন, ন্যায়বিচার পেতে তিনি থানায় মামলা করেছেন। নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

ইটভাটার মালিক মো. আবদুর রহিম মোল্লা মুঠোফোনে দাবি করেন, ইটভাটার শ্রমিক সর্দার সেরাজুল ইসলাম শ্রমিক সরবরাহের নামে ১৫ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৯ লাখ টাকা পরিশোধ হয়েছে। কিন্তু দলের সব শ্রমিক পালিয়ে যাওয়ায় ভাটার কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। রাম বসাকও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছিল। তবে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

গুরুদাসপুর থানার ওসি বলেন, রাম বসাককে শেকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। অভিযোগটি আমলেও নেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।