Thank you for trying Sticky AMP!!

নয়ন বন্ডদের সৃষ্টি পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে

নয়ন বন্ড

সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন ছিলেন ​ছিঁচকে সন্ত্রাসী। আট বছর আগে ছোটখাটো ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে পা বাড়ান। কয়েক বছর আগে যোগাযোগ গড়ে ওঠে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিক ও পুলিশের ​কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে। এই দুই শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ও ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে তোলেন অপরাধী চক্র ‘০০৭ গ্রুপ’। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তারা বরগুনা শহরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়। চক্রের প্রধান সাব্বির নাম ধারণ করেন ‘নয়ন বন্ড’।

বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা এবং হত্যার ঘটনার ভিডিও চিত্র ছড়িয়ে পড়ার পর এই অপরাধী চক্র ও নয়ন বন্ড ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এ ঘটনার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও তাঁর উত্থানের নেপথ্যে কারা রয়েছেন, সে প্রশ্ন এখানকার মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নয়ন বন্ডের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বরগুনা–১ আসনের সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ। তাঁর দুই চাচাতো শ্যালক শাওন তালুকদার ও অভিজিৎ তালুকদার ছিলেন নয়নের বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এর বাইরে নয়ন স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। বরগুনা সদর থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অন্তত ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে নয়ন বন্ড হয়ে ওঠার আগেই পুলিশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। নয়ন পুলিশের কথিত সোর্স (তথ্যদাতা) ​ছিলেন। সেই সূত্রে শহরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশের সহায়তা পেতেন। পরবর্তীকালে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার পর পুরো জেলা শহর দাপিয়ে বেড়ান নয়ন ও তাঁর বাহিনী। কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতালেব মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, একদল যুবক এমনিতেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে না। এর পেছনে শক্তি লাগে। তিনি বলেন, এদের আশ্রয়দাতাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। 

যেভাবে অপরাধে জড়ান নয়ন

নয়নের মা শাহিদা বেগম জানান, নয়ন ছোটকালে ভালো ছাত্র ছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। ২০০৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যায় তাঁর।

নয়নের একসময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নূর হোসেন (ইমাম) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর প্রেমে বিচ্ছেদ হয়, এরপর নয়ন গাঁজা সেবন শুরু করেন। ২০১১ সালে মাধ্যমিক পেরোনোর আগেই তিনি ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে যান। তখন মাদকের টাকা জোগাতে মানুষের মুঠোফোন, গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ছিঁচকে অপরাধ শুরু করেন।

নূর হোসেনের কথার সত্যতা পাওয়া যায় নয়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হওয়া ৯টি মামলার এজাহার ঘেঁটে। ২০১১ সালের ৭ জুলাই নয়নের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি হয়েছিল স্কুলগামী এক ছাত্রীর গয়না ছিনিয়ে নেওয়া এবং এটাকে কেন্দ্র করে ওই ছাত্রীর ভাইকে মারধরের অভিযোগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়নের আরেক বন্ধু এ প্রতিবেদককে বলেন, মাদকের টাকার জন্য নয়নের এমন অপরাধ দিন দিন বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়। ভুক্তভোগীরা তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির কাছে নয়নের বিষয়ে অভিযোগ করতে শুরু করেন। নয়নও তখন রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। একপর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুরাদ হোসেইনের হাত ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

এই মুরাদ হোসেইন সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথের অনুসারী। বরগুনা শহরের ডি কে পি সড়কে নয়নদের বাসার পাশেই বটতলা এলাকায় মুরাদের বাসা। মুরাদ এই প্রতিবেদকের কাছে নিজেকে সাংসদপুত্রের অনুসারী বলেই পরিচয় দেন। তবে তাঁর হাত ধরে নয়নের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

২০১৭ সাল নাগাদ নয়ন নিজের সন্ত্রাসী দল গঠন করে শহরের বড় সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন। এই বছরই তিনি ‘নয়ন বন্ড’ নামে ফেসবুকে আইডি খোলেন। এরপর নয়নের মতো তাঁর দলের সদস্যরাও নিজেদের নামের সঙ্গে ‘বন্ড’ শব্দ জুড়ে দেন।

সাংসদপুত্রের ছত্রচ্ছায়া

নয়নের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর সাংসদপুত্র সুনাম দেবনাথ এবং তাঁর চাচাতো শ্যালক শাওন তালুকদার ও অভিজিৎ তালুকদারের সঙ্গে নয়নের সখ্য গড়ে ওঠে। অভিজিৎ ও নয়ন একসঙ্গে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। তখন বিভিন্ন ছাত্রাবাসে গিয়ে ছাত্রদের কাছ থেকে মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়া, চাঁদাবাজি ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়া ছিল তাঁদের নিয়মিত কাজ।

>

রিফাত শরীফ হত্যার পর নয়ন বন্ড ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন
হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন
নয়ন বন্ডের উত্থানের নেপথ্যে কারা, সে প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে
নয়ন বন্ডের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নাম এসেছে সাংসদপুত্র সুনামের
নয়ন বন্ডের সঙ্গে সখ্য ছিল পুলিশের কিছু কর্মকর্তার

২০১৬ সালের একটি ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলার এজাহারে নয়ন ও অভিজিতের একসঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ওই মামলার বাদী বরগুনা শহরের বস্ত্র ব্যবসায়ী মো. শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, বরগুনা পশু হাসপাতালের পুরোনো ভবনের একটি কাজকে কেন্দ্র করে অভিজিৎ​ তালুকদার, নয়ন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। এ সময় তাঁরা চারজনকে মারধর করে দোকানের টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যান। শাহীনের অভিযোগ, এর আগে তাঁর বাসায়ও হামলা করা হয়। সেখান থেকে নারীদের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

নয়নের সঙ্গে সুনাম দেবনাথ এবং শাওন ও অভিজিতের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট হয় বরগুনার পাথরঘাটার এক ভুক্তভোগীর বর্ণনায়। মো. জিয়াউর রহমান নামের ওই ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বরগুনা শহর থেকে তাঁরা তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে পাথরঘাটায় ফিরছিলেন। পথে আরারখাল বাজার এলাকায় অভিজিৎ​, নয়নসহ তিনজন পথরোধ করে তাঁদের মোটরসাইকেল নিয়ে যান। এরপর তাঁদেরকে একটি জঙ্গলের মতো এক জায়গায় সারা দিন আটকে রাখেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখান থেকে উদ্ধার পেলেও তাঁদের এক বন্ধু ও মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান নয়ন ও অভিজিতেরা।

জিয়াউর বলেন, ওই রাতে তাঁরা সুনাম দেবনাথের কাছে গিয়ে বিষয়টা জানান। তখন সুনাম কোনো একজনকে ফোন করলে কিছুক্ষণ পর তাঁদের ওই বন্ধুকে নিয়ে আসেন শাওন তালুকদার। বন্ধুকে নিয়ে তাঁরা সুনামের দোতলা অফিস থেকে বের হওয়ার সময় দেখেন, নয়ন ও অভিজিৎ​ অফিসের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পরদিন সকালে সুনামের অফিস থেকে মোটরসাইকেলটি ফিরে পান। এরপর আর বরগুনা শহরে যাননি জিয়াউর রহমান।

বরগুনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় একটি পক্ষ নয়নের মৃত্যুর আগের ও পরের কয়েকটি ছবি এবং শাওন তালুকদারের কয়েকটি ছবি প্রথম আলোকে দেয়। ছবিগুলোতে দেখা যায়, নয়নের বাঁ হাতের কবজির ওপর একটি গোল ট্যাটু আঁকা রয়েছে। ঠিক একই ধরনের ট্যাটু আঁকা শাওন তালুকদারের বাঁ হাতেও। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান (অনিক) প্রথম আলোকে বলেন, শাওন তালুকদার হচ্ছেন সুনাম দেবনাথের ডান হাত। সুনামের অবৈধ কাজকারবার দেখাশোনা করেন শাওন। আর নয়ন যে তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াতেন, সেটা ২০১৭ সালেই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন বলে জানান জুবায়ের।

তবে শাওন তালুকদার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, নয়নের সঙ্গে তাঁর কখনোই যোগাযোগ ছিল না। একই রকম ট্যাটুর বিষয়ে শাওনের দাবি, বিবাহবার্ষিকীতে ভারতে ঘুরতে গিয়ে তিনি হাতে ট্যাটু আঁকিয়েছিলেন। নয়নের হাতে ট্যাটুর বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

শাওন জানান, তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবা​ সুবল কৃষ্ণ তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক।

বরগুনা পৌরসভার একজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, একবার একটি করাতকলে চাঁদা চাইতে গেলে নয়নকে তিনি পুলিশে দিয়েছিলেন। নয়ন তখন ফোন করলে সুনাম দেবনাথ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ ততক্ষণে পিকআপে করে নয়নকে নিয়ে রওনা হয়ে যায়। পরে জেনেছেন, থানায় পৌঁছানোর আগেই নয়নকে পুলিশের গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে গেছেন সুনাম।

কথা বলবেন না সাংসদ ও তাঁর পুত্র

নয়নকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সুনাম দেবনাথের বক্তব্য জানতে বৃহস্পতিবার থেকে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়। অনেকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে ফোন ধরার অনুরোধ জানিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার বরগুনার সিরাজউদ্দিন সড়কে সুনামের কার্যালয়ে গেলে এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর একজন কর্মচারী প্রথমে জানান, সুনাম ভেতরে আছেন। ​ওই কর্মচারী ভেতরে যান খবর দিতে। কিছুক্ষণ পর ভেতরের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন শাওন তালুকদার। তিনি বলেন, সুনাম নেই। ফোনে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু বারবার ফোন দিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এরপর শুক্রবার রাতে ঢাকা ​থেকে প্রথম আলোর একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ফোন দিলে সুনাম দেবনাথ ফোন ধরেন। পরিচয় জানার পর ‘থ্যাংক ইউ’ বলে ফোন কেটে দেন। এরপর তাঁর বাবা ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’

পুলিশের সঙ্গে সখ্য

২০১৭ সালের ৫ মার্চ নয়নকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় বলা হয়, ৪৫০ পিস ইয়াবা, ১০০ গ্রাম হেরোইন, ১২ বোতল ফেনসিডিল, হেরোইন মাপার একটি নিক্তিসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নয়নের সঙ্গে চলাফেরা ছিল এমন একাধিক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনার পর জেল থেকে বের হয়ে সদর থানা পুলিশ ও ডিবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে নয়ন সখ্য গড়ে তোলেন।

এই সখ্যর বড় উদাহরণ গত ১০ মে ‘গাঁজাসহ’ পুলিশের হাতে রিফাত শরীফের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাটি। ওই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সোলায়মান নামের এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, বালিয়াতলি ইউনিয়নের লাকুরতলায় সেদিন বরগুনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী ওবায়দুল কবীর, মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহেল খান এবং এক কনস্টেবল ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন নয়ন বন্ডও।

সোলায়মান বলেন, ওটা ছিল পুলিশের ফাঁদ। বণী নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ী সেখানে ইয়াবা বিক্রি করতেন। নয়নের সহায়তায় পুলিশ বণীকে আগেই গ্রেপ্তার করে। পরে যারা ইয়াবা কিনতে গেছে, তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ যখন রিফাত শরীফকে গ্রেপ্তার করে, তখন নয়ন ঘটনাটি ভিডিও করে রাখেন। এরপর তিনি সেটি পরিচিতদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।

এসআই কাজী ওবায়দুল কবীর প্রথম আলো​র কাছে দাবি করেন, তিনি ওই দিন নয়নকে দেখেননি। নয়ন তাঁর সোর্সও ছিলেন না। তবে নয়ন থানার অন্য পুলিশ কর্মকর্তা বা ডিবির সোর্স হিসেবে কাজ করে থাকতে পারেন।

এএসআই সোহেল খানও দাবি করেন, নয়নের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু নয়নের মুঠোফোনের কললিস্ট থেকে জানা যায়, ২৬ জুন রিফাত শরীফ হত্যার এক দিন আগেও নয়নের সঙ্গে সোহেল খানের যোগাযোগ হয়েছে। 

নয়নের সঙ্গে এসআই আসাদুজ্জামানের যোগাযোগ ছিল সবচেয়ে বেশি। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটেও তাঁর সঙ্গে নয়নের ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ড কথা হয়। আসাদুজ্জামান এখন পটুয়াখালীতে কর্মরত। গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নয়নের একটি পরিত্যক্ত মোটরসাইকেল তিনি জব্দ করেছিলেন। এ নিয়ে নয়ন মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

কললিস্ট অনুযায়ী গত মে-জুন মাসে মুঠোফোনে নয়নের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের সংখ্যা ছিল ৭৭ বার। এটা জানালে আসাদুজ্জামান দাবি করেন, নয়নের সঙ্গে তাঁর এত ঘন ঘন যোগাযোগ ছিল না।

বরগুনা শহরে মাদক ও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত একাধিক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ডিবি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক খায়রুল হাসানসহ তিনজন গোয়েন্দা কর্মকর্তারও সোর্স ছিলেন নয়ন। নয়নের কললিস্টে খায়রুল হাসানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এর কারণ জানতে চাইলে খায়রুল হাসান অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করেন। প্রথমে দাবি করেন, নয়নের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ ছিল না। আবার বলেন, ‘আসলে খারাপ মানুষের খবর তো খারাপ মানুষই রাখে।’ তারপর আবার বলেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না।

নয়নের কললিস্ট বলছে, তাঁর সঙ্গে সদর থানার এসআই মো. সোলায়মানেরও যোগাযোগ ছিল। যদিও সোলায়মানের দাবি, তিন মাস আগে তিনি বরগুনায় এসেছেন। নয়নের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল না।

পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন এমন এক যুবক প্রথম আলোকে বলেন, কোথায় মাদক আছে, সে বিষয়ে তথ্য দেওয়া, মাদকসহ কাউকে গ্রেপ্তার দেখাতে চাইলে তাঁর আশপাশে মাদক রেখে আসা, পরিচিত কাউকে মামলা থেকে বাঁচাতে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করিয়ে দেওয়াই তাঁদের কাজ। এখানে অর্থের লেনদেনের একটা ভাগ তাঁরা পান। আবার কোথাও অপরাধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়লে পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের উদ্ধার করেন।

নয়ন বন্ড কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সোর্স ছিলেন—এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোর্সিং বিষয়টা গোপনীয়। কার সোর্স কে, সে বিষয়ে কর্মকর্তারা বলতে বাধ্য নন। এটা আইন দ্বারাই সিদ্ধ।’

পুলিশ সুপার এ বিষয়ে পরিষ্কার জবাব না দিলেও নয়নের মা শাহিদা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ ছিল। এর মধ্যে ২০১৭ সালে তখনকার টাউন দারোগা নিয়মিত নয়নের কাছে তাঁর বাসায় আসতেন।

শাহিদা আক্তার বলেন, নয়ন তো এক দিনে ‘নয়ন বন্ড’ হননি। প্রভাবশালী মহল তাঁকে ব্যবহার করার জন্য ‘নয়ন বন্ড’ হিসেবে তৈরি করেছে। তবে প্রভাবশালী মহল ​কারা, সে সম্পর্কে শাহিদা বেগম কিছু বলেননি।