Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাসান খোয়ালেন ৫২ হাজার ডলার

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়েন হাসান মাহমুদ নাঈম। আউটসোর্সিংয়ের কাজ শেখার জন্য গত বছরের মে মাসে ধানমন্ডির রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তিনি। ভর্তি ফি বাবদ প্রতিষ্ঠানটি তাঁর কাছ থেকে নেয় আট হাজার টাকা। সেখানে তিনটি ক্লাস করেন হাসান।

সেখানে কস্ট পার অ্যাকশন (সিপিএ) মার্কেটিং, পেইড মার্কেটিংসহ নানা বিষয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর অনলাইনে কিছু কাজ করার পর প্রশিক্ষণার্থী হাসানকে দেওয়া হয় ১০০ থেকে ২০০ ডলার। রেক্স আইটির প্রধান আবদুস সালাম পলাশ অনলাইন অ্যাডভারটাইজিং মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য শিক্ষার্থী হাসানকে প্রলুব্ধ করেন। হাসান ওই প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন।

হাসানের বাবা এ টি এম মনিরুজ্জামান আজ শনিবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে হাসান এক হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিষ্ঠানটি পরের মাসে লাভসহ ১ হাজার ৮০০ ডলার দেয়। তাঁর দাবি, হাসানের মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীকে দ্বিগুণ অর্থ লাভের প্রলোভন দিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়। প্রথম প্রথম লাভের টাকা দেওয়া হলেও পরে প্রতিষ্ঠানটি টাকা না দিয়ে গড়িমসি করতে থাকে। তাঁর ছেলে হাসান বিভিন্নজনের কাছ থেকে নিয়ে সর্বমোট ৫১ হাজার ৯০৬ ডলার বিনিয়োগ করেন। এই টাকা আর ফেরত পাননি হাসান।

ফেরত চাইলে সালাম বোয়াসিররুস নামের ব্যাংকের অনলাইন ক্রেডিট কার্ড দেন। বাস্তবে বোয়াসিররুস নামের কোনো ব্যাংক বিশ্বের কোথাও নেই।

অনলাইন মার্কেটে কাজ করে লাখ লাখ টাকা আয় করার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ১০ মে মামলা হয়। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেন হাসানের বাবা এ টি এম মুনিরুজ্জামান। পেশায় মুনিরুজ্জামান একজন শিক্ষক।

ভুক্তভোগী হাসান মাহমুদ নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, রেক্স আইটির আবদুস সালাম পলাশসহ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইডির কাছে তিনি আবেদন করেছিলেন। প্রতারক চক্রটি তাঁর মতো আরও বহু প্রশিক্ষণার্থীর টাকা আত্মসাৎ করে নামে-বেনামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিনেছে। 

আবদুস সালাম বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে সিআইডি গত রোববার তাদের দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে।

মামলার পর ঘটনা তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আউট সোর্সিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথিত প্রতিষ্ঠান রেক্স আইটির আবুদস সালামকে গ্রেপ্তার করে ১১ মে ঢাকার আদালতে হাজির করে সিআইডি।

সিআইডি আদালতকে জানায়, আসামি আবদুস সালামসহ তাঁর সহযোগীরা ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করেন। ওয়েবসাইটে ভুয়া লেনদেন দেখিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্র। আসামি আবদুস সালাম ও তাঁর সহযোগীরা বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলে আত্মসাৎ করা টাকা জমা করেন। পরবর্তী সময়ে ওই টাকা তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কেনেন সালাম। আদালতকে সিআইডি আরও জানিয়েছে, আবদুস সালামের প্রতিষ্ঠান রেক্স আইটি ইনস্টিটিউটের নামে চারটি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। আর পলাশ ট্রেডিং করপোরেশনের নামে আরও একটি হিসাব আছে। রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানটির ৭০০ থেকে ৮০০ প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আসামি আবদুস সালামকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন ঢাকার আদালত। পরবর্তী সময়ে আবদুস সালামের স্ত্রী মনিরাতুল জান্নাত ও আহম্মেদুল রহমান বিপ্লব নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে ১৫ মে আদালতে হাজির করে সিআইডি। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য এই দুজনকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি নিয়ে প্রত্যেকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রধান আসামি আবদুস সালামকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১৫ মে আদালতে হাজির করা হয়। পুনরায় তাঁকে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালত পুনরায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে আবদুস সালামকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

আদালতকে সিআইডি প্রতিবেদন দিয়ে বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আবদুস সালাম অ্যাডভার্টিন নামের ওয়েবসাইটের হুবহু অ্যাডভার্ট গোল্ড নামের ওয়েবসাইট বানান। আসামি সালাম অ্যাডভার্ট গোল্ডকে অ্যাডভার্টিন ওয়েব সাইটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন। বিদেশি বহু ওয়েবসাইটের নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেন সালাম। এসব ওয়েবসাইটের ডেটাবেইস বানানো হয়। সালাম এমনভাবে কাজ করতেন যেন প্রশিক্ষণার্থীরা মনে করেন এটি আসল ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে টাকা বিনিয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের প্রলুব্ধ করতেন সালাম। প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা সালাম তাঁর নিজের, স্ত্রীর এবং মায়ের হিসাবে রাখেন।

তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের উপপরিদর্শক মো. আনসার উদ্দিন আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি সালাম আউট সোর্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য রেক্স আইটি ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

সংযুক্তি: প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাসান খোয়ালেন ৫২ হাজার ডলারসংযুক্তি: প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাসান খোয়ালেন ৫২ হাজার ডলার***নিউজে ৫ নম্বর প্যারার আগে এই প্যারাটি দিন
ভুক্তভোগী হাসান মাহমুদ নাঈম প্রথম আলোকে বলেন, রেক্স আইটির আবদুস সালাম পলাশসহ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইডির কাছে তিনি আবেদন করেছিলেন। প্রতারক চক্রটি তাঁর মতো আরও বহু প্রশিক্ষণার্থীর টাকা আত্মসাৎ করে নামে-বেনামে ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিনেছে।