Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা

সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার ওই বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। বিক্ষোভ, র‍্যালিসহ গণসংযোগে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, মামলার প্রধান আসামিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার, অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তার, প্রধান আসামি ওই ছাত্রের পলাতক পরিবারের সদস্যদের আইনের আওতায় আনা, নিহত শিক্ষকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থানীয় ও বাইরের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ভেদাভেদ দূর করতে আইন প্রণয়ন এবং কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

Also Read: দশম শ্রেণির ছাত্রের বিরুদ্ধে শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করার পর আশুলিয়ায় চিত্রশাইলে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন উৎপল কুমার সরকার। গত শনিবার দুপুরে দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ওই ছাত্র ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর। প্রথমে ওই ছাত্র শিক্ষকের মাথায় আঘাত করে এবং পরে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। এ ছাড়া স্ট্যাম্পের সুচালো অংশ দিয়ে পেটের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিক্ষোভ

গুরুতর আহত অবস্থায় উৎপলকে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার ভোরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই’, ‘শিক্ষক হত্যার বিচার চাই’, ‘কিশোর অপরাধ দমন হোক’, ‘হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’, ‘শিশু বলে ছাড় পাবে কেন মস্ত অপরাধ, যুবক হলে এরাই গড়ে দুর্নীতির বাঁধ’, ‘শিক্ষকদের মানহানি হচ্ছে পদে পদে, আমরা সবাই যাচ্ছি ডুবে অবক্ষয়ের নদে’ স্লোগানসংবলিত পোস্টার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল নিয়ে তাঁরা স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবি আদায়ে সেসব প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে গণসংযোগ করেন।

দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার প্রথম আলোকে বলে, জাতি গড়ার কারিগরকে যে হত্যা করতে পারে, তার এ সমাজে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ওই ছাত্রের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা যাঁরা দিনের পর দিন এটি সহ্য করেছেন, পরিবারের সেই সব সদস্যও দোষী। সে অভিযোগ করে বলে, ঘটনার পরপরই ওই ছাত্রের বাবা এসে তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। পুরো পরিবার পলাতক। মুন্নি সবার শাস্তি দাবি করে।

উৎপল কুমার সরকার (৩৫)

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হাসান বলে, ‘শুনেছি এর আগেও সে (ওই ছাত্র) বাসার সামনে একজনকে পিটিয়ে পা ভেঙে দিয়েছিল। শিক্ষককে যে এভাবে মারতে পারে, সে তো আমাদেরও মেরে ফেলতে পারে।’

নবম শ্রেণির ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলে, ‘উৎপল স্যার খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি আমাদের গুরুজন। তাঁকে হত্যা করা হলো, কিন্তু অপরাধীরা এখনো গ্রেপ্তার হলো না। আমরা চাই, দ্রুত তাকে (ওই ছাত্রকে) গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সকাল ১০টার দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপপরিদর্শক (কলেজ) মো. রবিউল আলম।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করা হলো। সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে।