বাসে বাদাম খেয়ে...

বাসে করে রাজধানীর মতিঝিল থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে বাদাম কিনে খেয়েছিলেন শিহাব সাকিব নামের এক যুবক। সেই বাদাম খেয়ে জ্ঞান হারান তিনি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে অজ্ঞান অবস্থায় গ্রিন রোড এলাকার এক বাড়ির সামনে পাওয়া যায়। অচেতন শিহাব খুইয়েছেন দামি একটি মুঠোফোন, কয়েক হাজার টাকা এবং ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড।

শিহাবের ছোট ভাই সাদাব তাবানি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এই বড় ভাই উত্তরার একটি বায়িং হাউসের কর্মকর্তা। অফিসের কাজে গত সোমবার মতিঝিল এলাকায় যান তিনি। কাজ শেষে বিকেলে বাসে করে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন শিহাব। একজন হকার বাসে উঠে প্যাকেট করা ভাজা বাদাম বিক্রি করছিলেন। অনেকের মতো শিহাবও এক প্যাকেট বাদাম কিনে খান। এর কিছুক্ষণ পর ঝিমুনি চলে আসে তাঁর। তারপর আর কিছু মনে নেই।

শিহাবের পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, লোকজন জানান, রাতে অল্প সময়ের জন্য জ্ঞান ফেরে তাঁর। শিহাবের ধারণা, তাঁকে কোনো প্রাইভেট কারে রাখা হয়েছিল। অনবরত ঘোরানো হচ্ছিল। এ সময় প্রচণ্ড মারধর করে তাঁর কাছ থেকে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর জেনে নেন কয়েক ব্যক্তি। পরে আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন শিহাব। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গ্রিন রোডে পড়ে ছিলেন তিনি। শিহাবকে উদ্ধার করে আশপাশের লোকজন স্থানীয় পুলিশ বক্সে খবর দেন। সন্ধ্যার দিকে জ্ঞান ফিরলে শিহাব তাঁর অফিস ও পরিবারের লোকজনকে খবর দেন। রাতে শিহাবকে তাঁর পল্লবীর বাসায় নেওয়া হয়।

বাড়ি ফিরে এসেও স্বাভাবিক হতে পারেননি শিহাব। তাঁর প্রচণ্ড জ্বর। জ্ঞান ফিরলেও লোকজন দেখলে রেগে উঠছেন তিনি। শিহাব সুস্থ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

শিহাবের মতো বেশ কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন অনেকে। ৮ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় এসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮০ জন।

পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, বাস, লঞ্চস্টেশনে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপর থাকে। রমজান মাস, দুই ঈদের মতো উৎসবের সময় এদের কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। বাসে কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ওঠেন। দু-একজন থাকেন হকারের বেশে। এঁদের সঙ্গে যাত্রীবেশে কয়েকজন বাসের ভেতর থাকেন। অনেক সময় বাসচালক ও সহকারীরাও অজ্ঞান পার্টির সঙ্গে জড়িত থাকেন। ডাব, বাদামজাতীয় কিছু খাওয়ানোর পর কোনো যাত্রী অচেতন হলে তাঁকে বাসের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর ওই যাত্রীর টাকা, মোবাইল ফোন সেটসহ সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়।
ডিবির সহকারী কমিশনার রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি দল ১২ মার্চ ঢাকার সবুজবাগ থেকে কামাল হোসেন, জসিম ও শফিক নামে অজ্ঞান পার্টির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে আটটি চোরাই রিকশা ও নেশাজাতীয় ২০টি এপিট্রা-২ ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সিরিঞ্জ দিয়ে এপিট্রা ট্যাবলেট তরল করে ডাবের পানিতে এবং বাদামের লবণের সঙ্গে গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেওয়া হয়। পরিমাণে বেশি থাকলে ভুক্তভোগী যাত্রী দুই থেকে তিন দিন অচেতন থাকেন। তবে ঘটনা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মামলা করা উচিত।