দিনাজপুর শহরের নিমনগর বালুবাড়ী এলাকায় বিয়ের তিন দিন পর ফরিদা ইয়াসমিন (২০) নামের এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ফরিদার স্বামীর পরিবার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলছে। তবে ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ফরিদাকে তাঁর স্বামী মদ্যপ অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন।
ফরিদার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলার বড় হরিপুর দারিয়াপাড়া গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে ফরিদা দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শহরের নিমনগর বালুবাড়ী এলাকার মো. আসাদুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির বাসার নিচতলায় মেয়েদের একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। ৯ অক্টোবর ওই মেস মালিকের বড় ছেলে প্রকৌশলী নূর এ আফরোজ সোহেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ফরিদার বিয়ে হয়। নূর আফরোজ ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে তাঁর বাবা জানান।
নূর আফরোজের বাবা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত শনিবার অনেক রাত পর্যন্ত সবাই গল্প-গুজব করেন। এ কারণে পরদিন রোববার সবাই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। বেলা ১১টার দিকে নাশতা খাওয়ার পর নূর আফরোজ ফরিদাকে মুঠোফোন কিনতে যাওয়ার জন্য পোশাক পরিবর্তন করে আসতে বলেন। তখন ফরিদা একটি বই আনার কথা বলে বাসার নিচতলায় মেসে তাঁর কক্ষে যান। ঈদের ছুটির কারণে মেসের অন্য মেয়েরা তখন ঘরে ছিলেন না। ফরিদার ফিরে আসতে দেরি দেখে তাঁর দেবর আমির আরাফাত নিচতলায় গিয়ে ঘরের দরজা দেখেন। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে তিনি ফরিদাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছটফট করতে দেখেন। এরপর আমিরের চিৎকার শুনে পরিবারের সদস্যরা এসে ঘরের দরজা ভেঙে ফরিদাকে নামিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১৫ মিনিট পর দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে ওই হাসপাতালে ফরিদার মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. তৌহিদুর রহমানের কাছ থেকে ফোনে খবর পেয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাজমুল আলমকে সেখানে পাঠান তিনি। নাজমুল মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশের ময়নাতদন্ত করান। হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আমির উদ্দিন জানান, ফরিদার গলায় গভীর কালো দাগ পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ থেকে ভিসেরা সংগ্রহ করে তা ঢাকায় গবেষণাগারে পাঠানো হয়।
ফরিদার মামা মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ফরিদার গলায় যে দাগ ছিল, তা ফাঁসের দাগ নয়। তাঁর জিব বের হয়নি। এ কারণে ফরিদার পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ, ফরিদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তাঁরা আদালতে মামলা করবেন বলে জানান আবু বকর সিদ্দিক।
থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিপজুর আলম মুন্সি বলেন, থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। দুটো মামলা একসঙ্গে চলতে পারে না। এ কারণে মেয়েপক্ষের অভিযোগ গ্রহণ করা হলেও মামলা রেকর্ড করা হয়নি।