Thank you for trying Sticky AMP!!

মাইলস্টোনের ছাত্রকে পেটানোর ভিডিও 'মজা করার জন্য'!

ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ ডেকে পাঠায় ‘মারধরের’ শিকার আরিফ (লাল শার্ট) এবং তাকে যে ‘মেরেছে’ সেই সামি (নীল শার্ট)। ছবি: শেখ সাবিহা আলম

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে ঘিরে ধরেছে নয়জন শিক্ষার্থী। ‘বেয়াদবি’র অভিযোগে তাকে দেওয়া হচ্ছে শাস্তি। গালাগালি, মারধর শেষে একটির পর একটি স্কুল ব্যাগ তার কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। এমন একটি ভিডিও নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলকালাম। এর মধ্যেই যে ছেলেটিকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখা গিয়েছিল, সে জানিয়েছে নিছক মজা করার জন্যই এমন একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল তার সহপাঠীরা।

ঘটনার জেরে আজ শনিবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা ডাকে। শিক্ষকেরা জানান, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তাঁরা শত শত ফোন পেয়েছেন। যাঁরা ফোন করেছেন তাঁদের বড় অংশই সাবেক শিক্ষার্থী ও উৎকণ্ঠিত অভিভাবক। নজর রাখছে ঢাকা মহানগর পুলিশও।

উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিওতে যাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায়, তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। মজা করার জন্য তাঁরা কাজটি করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। পুলিশের সাইবার অপরাধ দমন ইউনিট এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

আজ শনিবার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে কথা হয় ভিডিওতে উপস্থিত ১০ শিক্ষার্থীর ৮ জনের সঙ্গে। অন্য দুজন নোয়াখালী ও বরিশালে থাকায় কলেজে আসতে পারেননি। তাঁদের সবাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

ভিডিওতে যাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে দেখা গেছে সেই আরিফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিওটি পুরোনো। ২০১৭ সালের কোনো একসময় ধারণ করা। তখন তিনি ও ভিডিওতে আর যাঁদের দেখা যাচ্ছে তাঁদের সবাই মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। এখন সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। ভিডিওটি এভাবে প্রচারের কোনো সিদ্ধান্ত তাঁদের ছিল না। কেউ একজন এটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ হাজারবার ভিডিওটি শেয়ার হয়। এরপর তিনি পাল্টা একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়েছেন, মজা করার জন্য তাঁরা ভিডিওটি করেছেন। কথার প্রমাণ দিতে কলেজের শেষ দিনে ভিডিওতে থাকা অন্যান্যদের সঙ্গে তোলা ছবিও আপলোড করেছেন তিনি। তবে অনেকেই তাঁর কথা বিশ্বাস করতে চাইছেন না। বলা হচ্ছে, তাঁকে চাপ দিয়ে পাল্টা ভিডিওটি করা হয়েছে। আরিফ যতটা সম্ভব ফেসবুকে সবার সংশয় দূর করার চেষ্টা করছেন বলে জানান।

আরিফ আরও বলেন, তিনি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে বাসায় ফেরার পরই তাঁদের এক বন্ধু ফোন করে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কথা জানান। এরপর তিনি অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভিডিওতে আরিফকে পেটাতে যাঁকে দেখা যায় তাঁর নাম আবদুল্লাহ বিন সামি। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। কিশোরগঞ্জে ফুফুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি ঢাকায় এসেছেন। সেখানে ছিলেন যাঁর উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছিল, ‘অর্ণব, ভিডিও কর। ভিডিও কর।’ তিনি জানান, নতুন ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে উত্তরায় তৌহিদ্দুজ্জাবীন অর্ণবের বাসাতেই। পরিস্থিতি জটিল হয়ে গেছে এই খবর পেয়ে তাঁরা সবাই তৌহিদুজ্জাবীনের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানেই বিষয়টি খোলাসা করে নতুন ভিডিও আপলোডের সিদ্ধান্ত নেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক (প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, শিক্ষার্থীরা অন্যায় করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে এমন অভিনয় করা তাদের উচিত হয়নি। তিনি জবাব দিতে দিতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ফোন করেন। এমন ঘটনায় আইনি নিষ্পত্তির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

গেল সপ্তাহতেই গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে হয়রানির পর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তের পর ছয় শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার করে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবারও এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। শামসুল আরেফিন নামের এক অভিভাবক ইনবক্সে এই প্রতিবেদককে ভিডিওটি শেয়ার করে বিষয়টি খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান। এমনকি কলেজের একটি সূত্রও পুরো ভিডিওটি দেখে সহ্য করতে পারছিল না বলে জানায়।

যা আছে ভিডিওতে

নয়জন শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে বসা। একজন শিক্ষার্থী প্রশ্ন করছে, ‘নাম জানি কী তোর?’। অপর একজন চিৎকার করে বলছে, ‘ভিডিও কর। ভিডিও কর। এই অর্ণব ভিডিও কর।’ এর মধ্যেই ভিডিওতে যাকে হেনস্তা হতে দেখা যায়, সেই ছেলেটি গিয়ে শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়। একজন ছাত্র তাকে বলে, ‘গেটের মধ্যে ঢোকার সময় একটা বেয়াদবি করসস।’ আরিফ জবাবে বলে, ‘বুঝতে পারি নাই ভাইয়া।’ তখন তাকে কানে ধরতে বলা হয়।

আরিফ একপর্যায়ে হেসে ফেলে। তখন সে হাসছে কেন বলে প্রশ্ন তুলে একজন তাকে মারতে শুরু করে। মারতে নিষেধ করতে শোনা যায় অন্যদের। আরিফ বলতে থাকে, ‘বুঝি নাই, ভাই।’ সবাই মিলে ঘিরে ধরে তাকে কানে ধরতে বলে। আরিফকে উবু হয়ে বসে দু হাত দিয়ে চোখ মুছতে দেখা যায়। এক–এক করে সব ছাত্রের ব্যাগ তার কাঁধে চাপিয়ে ওঠবস করানো হয়। ভিডিও ক্লিপের শেষে আরিফকে ব্যাগসহ শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।