যশোরের কেশবপুরের ঘেরগুলোতে মাছের খাদ্য হিসেবে গোবর ও মুরগির বিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষের মল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের শিক্ষক মো. সাইফুদ্দীন শাহ বলেন, মাছের ঘেরে মানুষের মল ব্যবহার করলে সরাসরি মাছের ক্ষতি হবে। আর সেই মাছ খেলে মানুষেরও ক্ষতি হবে। তা ছাড়া পানিতে মল দিলে তা খাওয়ার পানির উৎসের সঙ্গে মিশে গেলে ব্যাপক স্বাস্থ্য-বিপর্যয় ঘটতে পারে।
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় জানায়, উপজেলায় তিন হাজার ৬৩১টি নিবন্ধিত মাছের ঘের রয়েছে। তবে অনিবন্ধিত ঘের ধরলে এর সংখ্যা পাঁচ হাজারের ওপরে। এত দিন ঘেরগুলোতে মাছের খাদ্য হিসেবে খৈল, ভুসি, ইউরিয়া সার, খুদসহ (চালের ভাঙা অংশ) গরু-ছাগলের নাড়ি, গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করা হতো। সম্প্রতি এর সঙ্গে মানুষের মল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল বসু জানান, মাস খানেক আগে রাতে শহরের নতুন পাঁজিয়া সড়ক দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। একপর্যায়ে রাস্তার ধারে মানুষের মলভর্তি দুটি পিকআপ দেখা যায়। পরে এলাকার লোকজন পিকআপ দুটিকে তাড়া দিলে সেগুলো পালিয়ে যায়। এসব মল মাছের ঘেরে ব্যবহার করার জন্য আনা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, এরপর তিন-চার দিন পর ওই সড়ক দিয়ে হাঁটতে গিয়ে মলের দুর্গন্ধে বমি আসার উপক্রম হয়।
মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল জানান, গত ১৮ আগস্ট রাতে তিনি বাড়ি ফেরার সময় মূলগ্রাম ঋষি (মুচি) পাড়ার কাছে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ পান। পরে কাঁসারিপাড়ার লোকেরা তাঁকে বলেন, রাতে ওই খানে একটি পিকআপ নষ্ট হয়ে যায়। পরে ওই পিকআপ থেকে মানুষের মল নছিমনে করে বিল বলধালির ঘেরে ঢালা হয়। স্বপন মণ্ডল আরও জানান, গত ১৩ জুলাই রাতে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল ফকির বাড়ি এলাকায় এলাকাবাসী হঠাৎ নাকে দুর্গন্ধ পেয়ে সুলতান আহম্মেদের মাছের ঘেরের পাশে গিয়ে দেখেন মানুষের মলভর্তি দুটি পিকআপ দাঁড়ানো। এর প্রতিবাদ জানালে পিকআপ দুটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। এ ঘটনায় পরদিন সুলতানের লোকজন প্রতিবাদকারীদের মারধর করেন।
মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মহিতোষ দাস জানান, এত দিন ঘেরে মাছের চাষ হলেও দুর্গন্ধ পাওয়া যায়নি। দু-তিন মাস ধরে এমন দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কেশবপুর শহরের অনেক বাসিন্দা জানান, প্রায়ই রাত ১০টার পর এমন দুর্গন্ধ বের হয়। এতে বাড়িতে থাকা যায় না।
স্থানীয় ঘেরমালিক আছাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মাছের খাদ্য হিসেবে গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করি, তবে তা সরাসরি নয়। মৎস্য বিভাগের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী, এগুলোকে জৈবিক সার বানিয়ে ব্যবহার করি।’ তিনি বলেন, ‘কিছু গ্রাম্য টাউট (প্রতারক) আমাদের কাছে মাঝেমধ্যে টাকা-পয়সা চায়। তাদের প্রয়োজন মেটাতে না পারলে তারা ঘেরে মানুষের মল দেওয়া হচ্ছে বলে প্রচার করে।’
ঘেরমালিক সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘তাঁর পাঁচটি ঘের রয়েছে। মধ্যকুল ঘেরে মুরগির বিষ্ঠা দেওয়ার সময় ওই এলাকার কিছু যুবক আমার ঘের পাহারাদারদের কাছে চাঁদা চায়। না দেওয়ায় তারা এটিকে মানুষের মল বলে প্রচার করে। এ নিয়ে সামান্য মারামারি হয়। পরে তা মিটমাট হয়ে যায়।’
কেশবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আছে, মানুষের মল মাছের ঘেরে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা এর প্রয়োগ না করতে মাইকে প্রচার করব। তার পরও এর সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’