Thank you for trying Sticky AMP!!

'নয়ন বন্ড' ও 007 গ্রুপ

সাব্বির আহম্মেদ নয়ন

পুরো নাম সাব্বির আহম্মেদ। এলাকায় পরিচিত নয়ন নামে। তবে কয়েক বছর আগে থেকে সাব্বির নিজের নামের সঙ্গে বন্ড জুড়ে দিয়ে ‘নয়ন বন্ড’ নামে নিজের পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। বন্ধু মহল থেকে শেষতক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপরাধীর তালিকাতেও তিনি বনে যান নয়ন বন্ড।

হলিউডি অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো এ দেশেও ভীষণ জনপ্রিয়। ‘বন্ড, জেমস বন্ড’ বলে নিজের পরিচয় দেওয়া ওই চলচ্চিত্রগুলোর প্রধান চরিত্রটির কাণ্ডকারখানা অতিমানবীয়। কোনো বাধাই তাঁকে রুখতে পারে না, নারী মহলেও সবাই তাকেই চায়, তবে তিনি কোনো বাঁধনে জড়ান না। এ রকম কোনো মোহ থেকেই হয়তো বরগুনার সাব্বির আহম্মেদ নিজের নামের সঙ্গে বন্ড লাগিয়েছিলেন বলে ধারণা এলাকাবাসীর। গড়ে তুলেছিলেন জেমস বন্ডের এজেন্ট নম্বর ধরে ‘007’ নামে ফেসবুক গ্রুপ। পার্থক্যটা হচ্ছে চলচ্চিত্রগুলোতে জেমস বন্ডের ভাবমূর্তি নায়কোচিত। আর বরগুনা শহরে সাব্বিরকে সবাই চেনেন প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সন্ত্রাসী হিসেবেই। 007 গ্রুপের সদস্যরাও এলাকায় বখাটে হিসেবেই পরিচিত, যার কারণে কেউ টুঁ শব্দটি না করেই এত দিন ধরে তাঁর সব গুন্ডামি সহ্য করে গেছেন।

বরগুনার সরকারি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড এখন সারা দেশেই আলোচিত। পুলিশ বলছে, তাঁকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। সাব্বিরসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অপরাধীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।

বরগুনা সরকারি কলেজের পেছনেই একটি সেমি পাকা ঘরে মাকে নিয়ে থাকেন সাব্বির। বাবা আবু বক্কর সিদ্দিকী বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। তাঁর একমাত্র বড় ভাই সিঙ্গাপুরপ্রবাসী। মূলত প্রবাসী ভাইয়ের আয়েই চলে সংসার। ২০১১ সালে বরগুনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর শহরের আইডিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন সাব্বির। এরপর তিনি নিজেকে বরগুনা সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে কলেজে যেতেন। তবে কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ গতকাল বলেন, ‘সাব্বির আমাদের কলেজের ছাত্র নয়।’

শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, মাদক সেবনের টাকার জন্য কয়েক বছর আগে ছিঁচকে চুরি, মুঠোফোন ছিনতাই, ছোটখাটো চাঁদাবাজি শুরু করেন সাব্বির। পেছনে ছিলেন স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছেলে। তাঁর সন্ত্রাসীপনায় অতিষ্ঠ হলেও তেমন কিছু করার ছিল না। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে আবার ফিরেছেন এলাকায়। পরে হেরোইন ব্যবসা ও সেবনের কারণে শহরের প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তবে তাঁর সব কর্মকাণ্ড ছিল সরকারি কলেজকেন্দ্রিক।

কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সাব্বির কখনো নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বা নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টিও জানতেন এলাকার লোকজন। আর এসব কারণে বরগুনা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে দীর্ঘ সময় ধরে তিনি দাপট ধরে রেখেছেন।

তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান বলেন, ‘ও (সাব্বির) কোনো দিনই ছাত্রলীগের রাজনীতি কিংবা কোনো কমিটিতে ছিল না। কেউ প্রমাণও দিতে পারবে না। এটা অপপ্রচার। সাব্বির কাদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব করত, সেটা এই শহরের সবাই জানে।’

পুলিশ জানায়, সাব্বিরের বিরুদ্ধে কয়েক বছর আগে মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হলেও জামিনে বের হয়ে যান। মাস দুয়েক আগেও আরেকটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে বের হন সাব্বির। তাঁর বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় মাদক, অস্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অপরাধে আটটি মামলা রয়েছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সাব্বিরের বিরুদ্ধে মাদকের দুটি, অস্ত্রের একটি এবং মারামারির পাঁচটি মামলা রয়েছে। সেগুলোর সব কটিতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাব্বিরের বিষয়ে পুলিশ কখনোই কঠোর ছিল না। কারণ, এলাকার প্রভাবশালী মহল তাঁর প্রশ্রয়দাতা।

আরও পড়ুন: 
মূল আসামিরা ধরা পড়েনি