সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং

ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম দেশে না বিদেশে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের শেষ অবস্থান কোথায়, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নেই বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ফয়সাল করিম বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয়ে গেছেন কি না, নাকি দেশে আছেন, এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। অপরাধী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত আইজিপি রফিকুল ইসলাম। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ ও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি জানাতে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সাধারণত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সংবাদ সম্মেলন করে থাকেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি—দুজনের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।

শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় ইনকিলাব মঞ্চ। এই সময়ের মধ্যে জবাব দিতে না পারলে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করে সংগঠনটি।

এই প্রেক্ষাপটে বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের কথা জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। সেখানে ওসমান হাদি হত্যা মামলার অগ্রগতি জানান পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, বিজিবির প্রতিনিধিরা। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম, বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী এবং পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিকেশনস) এ এইচ এম শাহাদাৎ হোসাইন।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম বলেন, ওসমান হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামির বিষয়ে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ধরনের তথ্য আসছে। তবে আসামি দেশে আছেন নাকি দেশের বাইরে চলে গেছেন, এ বিষয়ে তথ্য নেই। এ হত্যাকাণ্ডের কারণ কী ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে, এখনো জানা যায়নি। এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত কারণ নয়, রাজনৈতিক কারণ হতে পারে।

একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রধান আসামির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়ে বলেছেন তিনি পাশের দেশে চলে গেছেন, এ বিষয়ের সত্যতা কতটা, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা শফিকুল বলেন, ছবিটি তাঁরাও দেখেছেন। তবে তিনি যে ভারত থেকে এ ছবি দিয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা দেখেন কি না, সে প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, বিজিবি সবাই চেষ্টা করছে। যখন কোনো ঘটনা ঘটে, কখনো আসামিকে দ্রুত ধরা যায়, আবার কখনো দেরি হয়। জনদাবিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামিকে বের করার চেষ্টা চলছে।

শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ

ফয়সাল করিমকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর বিভিন্ন তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা সেসব তথ্য যাচাই করছেন। যাঁরা গুজব ছড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি মাথায় রয়েছে। আসামির রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ হত্যা মামলার সন্দেহভাজনদের পাচারকারী হিসেবে যাঁর নাম বারবার উঠে এসেছে, তাঁর নাম ফিলিপ। সে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য আছে।

বিজিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফিলিপকে ধরার জন্য মূলত আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। এটা এখনো চলমান আছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা তৎপরতা আমরা চালাচ্ছি। যত ধরনের টুলস ব্যবহার করা সম্ভব, সেই টুলসটা আমরা ব্যবহার করছি তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মুখ ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছিলেন। ১২ ডিসেম্বর মতিঝিল এলাকায় প্রচার চালিয়ে ফেরার পথে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে মোটরসাইকেল থেকে তাঁকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি।

ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় ফয়সাল করিম মাসুদ নামে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, ফয়সাল করিম সীমান্ত পার হয়ে ভারতে চলে গেছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। এ ঘটনায় ফয়সাল করিমের মা–বাবা, স্ত্রী, শ্যালকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারলেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।