
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যা মামলার অভিযুক্ত মূল আসামি ফয়সাল করিম মাসুদকে সীমান্ত এলাকায় আত্মগোপনে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. আমিনুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম আজ সোমবার এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
পুলিশ বলছে, শহীদ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত শুটার ফয়সাল ও তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলচালক আলমগীরকে সীমান্ত পার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরপুর এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী (বাপ্পী)। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন তাঁর ভগ্নিপতি আমিনুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ দুপুরে আমিনুল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। পরে আদালত তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদনে বলা হয়েছে, ‘জিজ্ঞাসাবাদে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৭) সীমান্ত দিয়ে আসামিদের পালাতে সহযোগিতা করেছেন মর্মে জানান। আসামি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর বক্তব্য আদালতে দিতে ইচ্ছুক। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।’
২৪ ডিসেম্বর মিরপুর-১১ থেকে আমিনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
পুলিশ জানায় হাদি হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া চারজন সাক্ষীও আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া আক্তার ও তাঁর শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান নোমানী, মোটরসাইকেলের মালিক মো. কবির, ভারতে পালাতে সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম, আমিনুল। তাঁদের মধ্যে ফয়সালের মা-বাবা, স্ত্রী, বান্ধবী ও শ্যালক দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ছিলেন। তিনি অনেক দিন ধরে গণসংযোগ করে আসছিলেন। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের কিছু পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে মাথায় গুলি করার পর আততায়ী ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান। পরে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি।
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বাদি হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।