বিদেশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এক ‘মাদক পাচারকারী’কে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গ্রেপ্তার ব্যক্তি ৩১ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পেয়েছেন। এ ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন অধিদপ্তরটির কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অধিদপ্তরের একটি দলের সদস্যরা গত সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর গুলশানের মাদানী অ্যাভিনিউ থেকে মো. তরিকুল ইসলাম (৩৭) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, তরিকুল আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিনই সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালানো হয় তাঁর কার্যালয়ে, যেটি ঢাকার গ্রিন রোডের বাইতুল লাজ নামের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত। অভিযানকারী দলের সদস্যরা গেলে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানরত উজ্জ্বল মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি দরজা খুলে দেন। পরে সেখান থেকে প্রায় দেড় লাখ ট্রামাডল বড়ি উদ্ধার করা হয়।
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে গ্রেপ্তার আসামি এত দ্রুত কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রশ্নের তৈরি হয়। মামলার কোনো দুর্বলতা ছিল কি না, সেটা নিয়ে নিজেরা পর্যালোচনা করেন কর্মকর্তারা।
ট্রামাডল একটি অপ্রচলিত মাদক। এটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের তফসিলে ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির কাছে এ ধরনের মাদক পাওয়া গেলে পরিমাণভেদে ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মাদক উদ্ধারের ঘটনায় গত মঙ্গলবার কলাবাগান থানায় মামলা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এজাহারে বলা হয়েছে, তরিকুল এসব মাদক বিদেশে পাচার করেন। তাঁর কাছ থেকে বিদেশে ওষুধ পাঠানোর ৩৫টি ইনভয়েস (চালান) পাওয়া গেছে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, তরিকুল নিজেই ট্রামাডল বিদেশে নিয়ে যেতেন। এ জন্য ভিসা করাতে তিনি একটি দেশের দূতাবাসে গিয়েছিলেন। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গোয়েন্দা তথ্য পায়। পরে তরিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সম্পর্ক রয়েছে।
বড়িগুলো মাদক কি না, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জামিন দিয়েছেন আদালত। রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেগুলো মাদক, তাহলে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম
তরিকুল ও উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ গত মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রিমান্ডের শুনানি শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে জামিনে বেরিয়ে যান আসামিরা।
বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে গ্রেপ্তার আসামি এত দ্রুত কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রশ্নের তৈরি হয়। মামলার কোনো দুর্বলতা ছিল কি না, সেটা নিয়ে নিজেরা পর্যালোচনা করেন কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) মো. বশির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মামলা ও জব্দতালিকা করা হয়েছে। জামিন দেওয়া আদালতের এখতিয়ার। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না।
তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, তরিকুলের পরিবারের একজন সদস্য জামিনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছেন। তিনি বিচার বিভাগে কর্মরত। বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে তরিকুলের মুঠোফোনে ফোন করা হয়েছিল। খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো মাদক উদ্ধারের পর তা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। তরিকুলের কার্যালয় থেকে উদ্ধার হওয়া বড়ি আসলে মাদক কি না, সেটা নিশ্চিত হতে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আইনজীবী নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বড়িগুলো মাদক কি না, সেটা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের জামিন দিয়েছেন আদালত। রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেগুলো মাদক, তাহলে আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো মাদক উদ্ধারের পর পরীক্ষা হয়। এটা একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার কারণে প্রথম দিনই আসামির জামিন পেয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা নয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, তরিকুল ও উজ্জ্বল ভারতের গুজরাট ও ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) কাছের ওষুধের দোকানগুলো থেকে ট্রামাডল সংগ্রহ করতেন। পরে তা কয়েকটি দেশে পাচার করতেন।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, তরিকুল ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ (একধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা) মাধ্যমে মাদক বিক্রির টাকা লেনদেন করেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা বস্তু মাদক হয়ে থাকলে জামিনের সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনায় জামিন সাধারণত নিম্ন আদালতে দেওয়া হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ আদালত জামিন দিয়ে থাকেন, তা-ও অনেক সময় পর।