প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার সময় কুড়াল হাতে মাইনুল ইসলাম
প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার সময় কুড়াল হাতে মাইনুল ইসলাম

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা

কুড়াল হাতে সেই যুবকসহ গ্রেপ্তার আরও ১০ জন

দুই দিনে গ্রেপ্তার ২৯ জন। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ছবি দেখে শতাধিক সন্ত্রাসী শনাক্ত। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চলাকালে জ্বলন্ত কার্যালয়ের সামনে কুড়াল হাতে উল্লাস করছিলেন এক যুবক। এমন একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা দিচ্ছেন আরেক যুবক।

ভিডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্ট ও ছবি বিশ্লেষণ করে এই দুজনসহ আরও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এঁদের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে দুই দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৯ জনকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান গতকাল এ তথ্য জানান।

হামলা ও আগুন দেওয়ার পর প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে হামলাকারীদের একজন মুয়াজ বিন আব্দুল রহমান

কুড়াল হাতে উল্লাসরত যুবকের নাম মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম। তাঁকে গতকাল ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁর গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ইসলা বাড়ি গ্রামে। থাকেন ঢাকার উত্তরায়।

আরেক ভিডিওতে যিনি ওই রাতে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে বলছিলেন, তাঁকেও ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। তিনি কারি মুয়াজ বিন আবদুল রহমান। পুলিশ জানায়, তিনি যুব মজলিসের শরীয়তপুর জেলা শাখার নেতা। শরীয়তপুর সদর থানার পশ্চিম কান্দি গ্রামে তাঁর বাড়ি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তিনি বলছিলেন, ‘যেটা ৫ আগস্ট করার কথা ছিল, আমরা পারিনি। আজকে সেটা করেছি হাদি ভাইয়ের অসিলায়।’

ওই রাতে ঘটনাস্থলে প্রথম আলোতে আক্রমণের ছবি ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে হামলায় যোগ দিতে অন্যদের আহ্বান জানান—এমন একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাঁর নাম নিয়াজ মাহমুদ ফারহান। তাঁর বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা গ্রামে।

গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া অন্য সাতজন হলেন আবদুর রহমান (গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী), মো. জান্নাতুল নাঈম (রংপুর), মো. ফয়সাল আহমেদ (চাঁদপুর), জুবায়ের হোসাইন (নোয়াখালী), মো. আলমাস আলী (ময়মনসিংহ), জুলফিকার আলী ওরফে সৌরভ (ঢাকার শাহ আলী) ও মো. জাকির হোসেন শান্ত (ময়মনসিংহ)।

জাকির হোসেন শান্তকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালীর চকপাত্রা গ্রামে। থাকেন ঢাকার হাজারীবাগে। সিটিটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শান্ত প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থল থেকে লাইভ ভিডিও করে সেটা নিজের ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ারও করেছেন।

প্রথম আলো কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার জাকির হোসেন শান্ত

পুলিশ সূত্র জানায়, ভিডিও ফুটেজ, ছবি বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত হিসেবে শতাধিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এ ছাড়া দুটি জাতীয় দৈনিকের কার্যালয়ে হামলার উসকানিদাতা হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে আরও অন্তত ২০ জনকে। এর বাইরে ডেইলি স্টার কার্যালয়ের সামনে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা–অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নতুন করে গ্রেপ্তার ৯ জন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় সন্ত্রাসীরা। আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও বাধা দেয় তারা। ওই রাতে ছায়ানট ভবনেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় উদীচী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

হামলার ঘটনায় গত রোববার রাতে প্রথম আলো এবং সোমবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার তেজগাঁও থানায় মামলা করেছে।