
রাজধানীতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আসন্ন নির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণ নির্বিঘ্ন হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই সংশয়ের কথা প্রকাশ করেন এই মোর্চার যুগ্ম সমন্বয়ক এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের ভালুকায় তৈরি পোশাককর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলাসহ সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। এতে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মনীন্দ্র কুমার বলেন, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাঝে ভয়ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে অভিযোগ করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মঠ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার ওপর হামলা করা হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়কে অরক্ষিত অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা মাঠে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২ হাজার ৩০০ মানুষের ওপর নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বিচার লক্ষ করিনি। প্রতিটি ঘটনার বিচারের দাবি জানাচ্ছি। দীপু চন্দ্র দাস হত্যার বিচারে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতেই হামলা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের কেউ ধর্ম অবমাননা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেবেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ধর্ম অবমাননার নামে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিতাড়িত করতেই একটি গোষ্ঠী এই কাজ করছে।
সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার রায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘সারা দেশে সংখ্যালঘু শূন্যের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে চাই সরকার। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দেব না।’
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, বিজয়ের মাসে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাঁচজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনেও হচ্ছে। এসব হত্যার প্রধান কারণ হলো বিভেদকামী শক্তিকে মদদ দেওয়া হয়েছে। প্রচারমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানেও হামলা হচ্ছে।
নির্মল রোজারিও সভাপতিত্বে এই সমাবেশে সঞ্চালনা করেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতা পলাশ কর্মকার। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা।