প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনা। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনা। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫

প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সত্যে সাহসে অপরাজেয় বন্ধুত্বের আনন্দময় উৎসব

সত্য, সাহস আর বন্ধুত্বের বন্ধনে গড়া সংগঠন প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৭ বছর পূর্ণ হলো। ‘সত্যে সাহসে অপরাজেয় বন্ধুত্ব’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দঘন উৎসব হলো বৃহস্পতিবার। হেমন্তের বিকেল থেকে সন্ধ্যাজুড়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে এ আয়োজনে সারা দেশের বন্ধুসভার প্রতিনিধিরা সমবেত হয়েছিলেন।

আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর বন্ধুসভার থিম সং ‘ও বন্ধু, সুন্দর একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ব সবাই’–এর সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন হোসাইন ইসলাম, জাকিয়া লিমা, মাসিয়াত দিহান, দোলা রহমান ও স্নিগ্ধা পালমা।

জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫

অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল সংগীত, নৃত্য, ভালো কাজের জন্য সেরা বন্ধুসভার পুরস্কার বিতরণী ও আলোচনা দিয়ে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে সারা দেশের বন্ধুসভার নতুন–পুরোনো সদস্যদের অনেকেই সমবেত হন। পরস্পরে কুশল বিনিময়, আলাপচারিতায় অন্তরঙ্গ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বন্ধুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে আলোচনা, বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া, পুরস্কার প্রদান এভাবেই চলতে থাকে অনুষ্ঠান। প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ বলেন, ২৭ বছর ধরে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা অনেক বড় একটি অর্জন। বন্ধুত্বের জন্য দরকার সত্য, সাহস; দরকার আলো।

প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি আরও বলেন, ‘নিজের আলোকিত হওয়ার পাশাপাশি দেশকে আলোকিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বন্ধুসভার বন্ধুরা। এই সংগঠনে এসে আমরা অনেক কিছু অর্জন করি, অনেক কিছু শিখি। বন্ধুরা নতুন শক্তি উদ্যম নিয়ে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করে যাবে।’

বন্ধুদের জন্য উৎসাহমূলক বক্তব্য দেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫

বন্ধুসভা সারা বছর ধরে অনেক রকমের কাজ করে থাকে। সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক এসব কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুরা নিজের অর্থ ব্যয় করেন, নিজেরাই কর্মসূচি নেন। অনেক সময় জাতীয় কমিটির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থেকেও কাজ করেন। গত এক বছরের কাজের বিবরণী তুলে ধরেন জাতীয় পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন মল্লিক। এ সময় মঞ্চের নেপথ্যের ডিজিটাল পর্দায় এসব কার্যক্রমের পরিচিতি তুলে ধরা হয়।

ফরহাদ হোসেন জানান, দেশে এখন ১৪৩টি আর দেশের বাইরে বন্ধুসভার ৩টি শাখা রয়েছে। এতে যুক্ত আছেন লক্ষাধিক বন্ধু। বন্ধুসভার জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির আওতায় তাঁরা সারা দেশে ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৯টি গাছের চারা রোপণ করেছেন। আরেকটি কর্মসূচি ‘সহমর্মিতার ঈদ’। এতে বন্ধুরা তাঁদের নিজেদের ঈদের কেনাকাটার বরাদ্দ থেকে একটি অংশ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ঈদের পোশাক কিনে দিয়েছেন। এতে ৪ হাজার ৩৩১টি শিশুকে ঈদের নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

এ ছাড়া বন্ধুসভার সদস্যরা পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বইপড়া ও প্রতি সপ্তাহে পাঠচক্রের আয়োজন করে থাকেন। গত বছর এমন পাঠচক্র হয়েছে ৪১২টি। এসবের বাইরেও প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা নিজেদের মতো করে অন্তত ‘একটি করে ভালো কাজ’ করে থাকেন। এই ভালো কাজটি হয় প্রতিযোগিতামূলক।

বন্ধুসভাগুলো তাদের ভালো কাজের বিবরণ জাতীয় পর্ষদের কাছে পাঠায়। বিচারকমণ্ডলী সেগুলো বিচার করে ‘সেরা দশ’ নির্বাচন করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়। এবার সেরা দশের পুরস্কার পেয়েছে রংপুর, গাজীপুর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটিয়া ,জামালপুর ও কেরানীগঞ্জ বন্ধুসভা।

চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী এসেছিলেন বন্ধুসভার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫

বিচারকমণ্ডলীর সদস্য বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী পুরস্কার তুলে দিয়ে বলেন, এত ভালো ভালো কাজ বন্ধুরা করেছেন, সেখান থেকে সেরা বাছাই করা তাঁদের পক্ষে খুব কঠিন ছিল। তবে মানবিকতা, স্বাবলম্বিতা অর্জন, টেকসই উন্নতি—এসব বিষয় বিবেচনা করে সেরা কাজ বাছাই করা হয়েছে।

বন্ধুসভার বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন বিনোদনজগতের তারকারাও। ২০১৮ সালের মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী এবং মডেল ও অভিনয়শিল্পী রোকাইয়া জাহান চমক মঞ্চে এসে বন্ধুসভার সদস্যদের অভিনন্দন জানান।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা বাংলাদেশের অগ্রগতির চাকায় শক্তি জোগাবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশকে আলোয় ভরিয়ে তুলবে। যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা আসে, সবাই মিলেই তা প্রতিরোধ করবে।

প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাফর সাদিক বলেন, বন্ধুসভার বন্ধুরা আজ একটি বিশাল পরিবারের মতো পরিণত হয়েছে। জীবনের নানা কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁরা সময় ও অর্থ ব্যয় করে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে আরও একটু ভালো করা; মানুষের স্বপ্নপূরণে, বিপদে–আপদে পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য তাঁরা কাজ করছেন। বন্ধুরা এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

বিচারকদের সঙ্গে বন্ধুসভার দশটি জেলার পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজয়ীরা। রাজধানীর জাতীয় আর্কাইভস ভবন মিলনায়তন; ১৩ নভেম্বর ২০২৫

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুমিত আর রশিদ, আবুল খায়ের গ্রুপের হেড অব কমিউনিকেশন রাফে সাদনান আদেল ও বাস নেটওয়ার্কের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট আশেকুজ্জামান, প্রথম আলোর চিফ ডিজিটাল বিজনেস অফিসার জাবেদ সুলতান, মহানগর বন্ধুসভার সভাপতি মাহমুদা বুশরা, বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের উপদেষ্টা সংগীতশিল্পী সাজেদ ফাতেমী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন মাহবুব পারভেজ। পরে বন্ধুসভার সদস্যরা একক ও দলীয় নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ। অনুষ্ঠানের সহযোগী ছিল রেজ্যুভা ওয়েলনেস, ওয়ান্ডার উইমেন, বাস নেটওয়ার্ক ও আমা কফি।