বেঙ্গলে কাজী গিয়াসউদ্দিনের সৃজনকর্মের প্রদর্শনী

শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের চিত্রকর্মের ক্যাটালগ উন্মোচন করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, শিল্পীর মেয়ে কাজী মায়া, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, কাজী গিয়াসউদ্দিন, ইতো নাওকি ও নিসার হোসেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে
ছবি: সংগৃহীত

নিহঙ্গা জাপানের অন্যতম অঙ্কনরীতি। দেশটিতে পড়তে গিয়ে এই রীতি মনে ধরে যায় বাংলাদেশের শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের। বাংলার নকশিকাঁথা থেকে এবং জাপানের নিহঙ্গারীতির অনুপ্রেরণায় অনেক নতুন ছবি এঁকেছেন এই শিল্পী। তেল ও জলরঙে আঁকা গিয়াসউদ্দিনের এসব ছবি নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে প্রদর্শনীর।

আজ শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হয়েছে শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘দ্য ওয়ার্ক অব ক্রিয়েশন টু’। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন।

প্রদর্শনীর ছবিগুলো আঁকা হয়েছে কাগজে। ব্যবহার করা হয়েছে জলরং, তেলরং। কিছু ছবি আঁকা হয়েছে বোর্ডে তেলরঙে আর কোলাজে। ছবিগুলোয় রঙের উজ্জ্বলতা ও রেখার গভীরতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কোনো কোনোটিতে ছেঁড়া কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কোলাজ। সেখানে দেখা যাবে একটি বুননতলের আড়ালে আরও তল, রেখা ও আঙ্গিকের নান্দনিক ছন্দ। গ্যালারিতে গুচ্ছ গুচ্ছ চিত্রকর্মের প্রদর্শন সেগুলোকে টুকরো সংলাপে রূপ দিয়েছে যেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিসার হোসেন বলেন, গিয়াস স্যারের কাজের গভীরে তাঁর শৈশবে দেখা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যা জাপানে থাকাকালে তাঁর শিকড়ের প্রতি ভালোবাসার উপলব্ধি।

চিত্রকর্ম দেখছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন

ইতো নাওকি বলেন, ‘এই বয়সে এসেও কাজী গিয়াস প্রতিনিয়ত নতুন আঙ্গিকে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এই পথচলার সহযাত্রী হতে পেরে আমি এবং জাপান সরকার আনন্দিত ও গর্বিত।’

শিল্পী কাজী গিয়াস প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিনি এমন এক শিল্পী, যিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে বড় বড় স্বীকৃতি পেয়েছেন। কেবল মেধাই নয়, তাঁকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম। তাঁর চিত্রকর্ম সমসাময়িক সবার থেকে ব্যতিক্রম।

কাজী গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আমি দুঃখ ভোলার জন্য ছবি আঁকি, আনন্দের জন্য ছবি আঁকি। যত দিন ভালো লাগবে, তত দিন ছবি এঁকে যাব। এ প্রদর্শনীর ছবিগুলো অনেক যত্ন করে এঁকেছি। আমার অনুভূতি ও উপলব্ধি এ ছবিগুলোতে প্রকাশিত।’

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কাজী গিয়াসের সঙ্গে আমাদের প্রায় ২২ বছরের সম্পর্ক। তাঁর শিল্পকর্মের সঙ্গে আমরা আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করি। ২০১৯ সালে নবনির্মিত বেঙ্গল শিল্পালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁর প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। এ শিল্পীর ষষ্ঠ একক প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত।’

কাজী গিয়াসউদ্দিন জাপানের টোকিও ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড মিউজিক থেকে পিএইচডি করেছেন গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। মোহাম্মদ কিবরিয়ার পর তিনি বিমূর্ত ছবিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কিছুদিন চারুকলায় শিক্ষকতার পর তিনি পুরোপুরি স্বাধীনভাবে ছবি আঁকায় মনোযোগ দেন। তাঁর সেই অধ্যবসায় বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গন সমৃদ্ধ করেছে।

প্রদর্শনীতে রয়েছে শিল্পীর আঁকা দেড় শতাধিক চিত্রকর্ম। প্রদর্শনী চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মঙ্গলবার বাদে প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য গ্যালারি খোলা থাকবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ প্রমুখ।