রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

অবরুদ্ধ শিক্ষক-কর্মকর্তারা ১০ ঘণ্টা পর মুক্ত, অবস্থান কর্মসূচি চলছেই

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। সোমবার সকালে
 ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরুদ্ধ রেজিস্ট্রার, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০ ঘণ্টা পর মুক্ত হয়েছেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে গতকাল রোববার রাত দুইটায় প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের তালা খুলে দেওয়ার পর তাঁরা বাসায় চলে যান। নারী শিক্ষকদের বাসায় পৌঁছে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে বিকেল চারটায় তাঁদের অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। আজ সোমবার সকাল থেকেও শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস বলেন, ‘গতকাল বিকেলে আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাতে এসেছিলাম। এরপর থেকে রেজিস্ট্রারসহ আমরা ৩০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা অবরুদ্ধ হয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকার পর আমরা মুক্ত হয়েছি।’

গতকাল বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৩০ জন। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালাবদ্ধ করে বাইরে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। দিবাগত রাত একটা পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত একটার পর শিক্ষকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে রাত দুইটার তাঁরা মুক্ত হন।

এদিকে আজ সকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁদের মুখপাত্র আবু জাফর বলেন, সংকট সমাধানে উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। আলোচনা শেষে তাঁরা পরবর্তী কর্মসূচি দেবেন।

২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন। অপমান সহ্য করতে না পেরে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুল হাসান তুহিন নামের এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন অভিযুক্ত ফারহানা ইয়াসমিন। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

২১ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। ২২ অক্টোবর সিন্ডিকেট সভায় ওই প্রতিবেদনের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট সভা মুলতবি হওয়ায় রাতেই আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল দিনভর মহাসড়ক অবরোধ, অনশন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলা অবস্থায় দুজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গতকাল বিকেল চারটায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে এসে অবরুদ্ধ হন রেজিস্ট্রার, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী বলেন, ‘আমি এসেছিলাম ভিসি মহোদয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংকট কাটিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অথচ আমাদের অবরুদ্ধ করা হলো।’