আড়ত থেকে বের হলেই ২ টাকার লেবু হয়ে যায় ১০

বিক্রির জন্য জিপে করে লেবু নিয়ে আসা হয়েছে বাজারে। গতকাল দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারে।
ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের পাহাড়ি টিলাভূমিতে লেবুর আবাদ হয়। সবচেয়ে বেশি হয় শ্রীমঙ্গলে। সেখানকার পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে লেবুর দামে বিস্তর ফারাক পাওয়া গেছে। এক হাত ঘুরে লেবুর দাম দুই থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। ২ টাকা দামের ছোট আকৃতির প্রতিটি লেবু খুচরায় ৮ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। আবার বড় আকৃতির ১০ টাকা দামের একেকটি লেবু খুচরায় ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

লেবুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন লেবুর মৌসুম না। লেবু উৎপাদনের মৌসুম বর্ষাকাল। বৈশাখ থেকে ভাদ্র এই সময় লেবুর ফলন বেশি হয়। উৎপাদন কম থাকায় লেবুর বাজারদর বেশি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পবিত্র রমজান মাসের বাড়তি চাহিদা।

ভোর চারটা-পাঁচটা থেকে জেগে ওঠে শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজার এলাকাটি। বিভিন্ন পাহাড়ি টিলা থেকে ঠেলাগাড়ি ও জিপ গাড়িতে করে লেবু নিয়ে আড়তে ভিড় করেন চাষিরা। ধীরে ধীরে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় বাড়ে, শুরু হয় হাঁকডাক। তারপর সেই লেবু চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

গতকাল সোমবার শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারে পাইকারি আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, আকার, রস ও রং অনুযায়ী এখানকার একেকটি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ১০ টাকায়। অথচ ২৫ কিলোমিটার দূরে জেলা সদরসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতিটি লেবু ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল লেবু ঘরের আড়তদার আশুতোষ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, রোববার থেকে দাম একটু বেশি। শনিবার যে লেবু ২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোমবার সেটা আড়াই থেকে ৩ টাকা। কাঁচামালের দামের কোনো ঠিকঠাকানা নেই। আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। আর রোজার সময় লেবুর চাহিদা বেড়ে যায়। এতেও দাম কিছুটা বাড়ে।

চুনু মিয়া প্রায় ১৬ বছর ধরে পাইকারি দরে লেবু কিনে সিলেট শহরে পাঠান। এক বস্তা লেবু পাঠাতে তাঁর খরচ হয় ১২০ টাকা। এক বস্তায় ছোট হলে ৮০০ এবং বড় হলে ৫০০ লেবু থাকে। তিনি বলেন, রোববার আড়াই থেকে সাত টাকা দরে লেবু কিনে সিলেট পাঠিয়েছেন। সেখানে খুচরা বিক্রেতারা একেকজন একেক দামে বিক্রি করেন।

এদিকে মৌলভীবাজার শহরের টিসি মার্কেটের এক খুচরা ব্যবসায়ী গতকাল জানালেন, শ্রীমঙ্গলের আড়ত থেকে লেবু মৌলভীবাজার আড়তে আসে। সেখান থেকে তাঁরা ৪ থেকে ১২ টাকায় কেনেন।

একই বাজারে গতকাল সবজি কিনতে আসা এক নারীর কাছে এক ব্যবসায়ী এক হালি বড় লেবুর দাম হাঁকলেন ৮০ টাকা। ওই নারী দাম শুনেই বললেন, ‘আর লেবু খাওয়ার দরকার নাই।’ পরে অন্যদিকে হেঁটে চলে গেলেন তিনি।

লেবুচাষি শ্রীমঙ্গলের ডলুবাড়ির জনক দেব বর্মা প্রথম আলোকে বলেন, এবার লেবুর দাম বেশি ছিল না। এই এক সপ্তাহে একটু বেড়েছে। এই মৌসুম, রোজা ও কোরবানির ঈদেই লেবুর ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু লাভের বড় অংশটাই চলে যায় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের পকেটে।

শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মো. আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন লেবুর মৌসুম না। এ সময় এমনিতে কিছু দাম থাকে। খরচ বেশি হওয়ায় উৎপাদন কম হয়। শ্রীমঙ্গল নতুন বাজার ও মুছাই মিলে প্রতিদিন লেবুসহ পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত কোটি টাকার ফসল বিক্রি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, লেবুর ফলন মূলত মে-জুন থেকে বাড়ে। জেলায় ১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলেই বেশি। গত বছর উৎপাদন ছিল ২৭ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন।

ঢাকায় লেবুর দাম চড়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রায়হান আহমেদের দোকানে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ১২০ টাকা ও গোল বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই দোকানে দেশি শসার কেজি ১২০ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি প্রায় ২০০ গ্রাম ওজনের লেবুর হালি ১০০ টাকা ও প্রায় ১৭০ গ্রাম ওজন আকারের লেবুর হালি তিনি ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন।