
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত গড়াইটুপি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। ভোটাররা রয়েছেন দীর্ঘ লাইনে। এ সময় অনুমতি ছাড়াই সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক যুবক ভোটকেন্দ্রের বুথে ঢুকে পড়েন। সেখানে ভোটারদের ভোটদানে প্রভাব খাটানোর চেষ্টাকালে ভোটার ও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের মনে সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই যুবককে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে জানা যায়, তিনি আসলে সাংবাদিক নন। সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করাই তাঁর কাজ।
ঘটনাটি আজ মঙ্গলবার দুপুরের। ‘প্রতারক’ ওই যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম (২৫)। দুপুরে ভোট গ্রহণ চলাকালে সড়াবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথম আলোর অপরাধবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিক পরিচয়ে বুথের ভেতর ঢুকে পড়েন তিনি। পরে তাঁকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতারণার অভিযোগে ওই যুবককে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. পপি খাতুন দুপুরে দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় এই সাজা প্রদান করেন।
প্রতারক আরিফুলের বিরুদ্ধে প্রথম আলোর অপরাধবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল ও নতুন খবর পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণাসহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে।
আরিফুলের বাড়ি সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের পূর্বপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম আলোর অপরাধবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিক এবং স্থানীয় দৈনিক পশ্চিমাঞ্চল ও নতুন খবর পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি পরিচয়ে প্রতারণাসহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। আরিফুলের বাবা শাহজাহান আলী একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁকে ধরতে সরকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আরিফুল কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই প্রথম আলোর সাংবাদিক পরিচয়ে সড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বুথে ঢুকে প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেন। ভোটার ও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারা তাঁকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ সময় পুলিশের হাত থেকে কৌশলে ছুটে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি। পরে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন আনসার সদস্য প্রায় আধা কিলোমিটার দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম তাঁকে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে সোপর্দ করেন। এ সময় প্রতারক আরিফুল অকপটে অপরাধের কথা স্বীকার এবং আগামীতে এ ধরনের কাজ করবেন না মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পপি খাতুন গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, আরিফুল দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জনগণকে প্রতারিত করে আসছেন। আজ ভুয়া সাংবাদিক পরিচয়ে কার্ড দেখিয়ে তিনি ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। স্থানীয় ভোটাররা তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার পর তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় এনে সাজা প্রদান করা হয়। পরে আসামির ভাই এসে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
এদিকে জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি) উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে জানান, আরিফুল এর আগে সেনাবাহিনীর সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পরিচয়ে প্রতারণা করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন।