কুমিল্লা বিএনপি: অনুসারীরা ‘ভালো পদ না পাওয়ায়’ পদত্যাগের ঘোষণা নেতার

বিএনপির লোগো
বিএনপির লোগো

কুমিল্লা মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীরা। কমিটিতে দলের ‘ত্যাগী নেতা-কর্মীরা’ প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তাঁরা গণপদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন। একইসঙ্গে নবগঠিত মহানগর কমিটির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা ওরফে টিপু, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন ও কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে বিষোদগার করেছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে নগরের বাদুরতলা এলাকায় দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমিন উর রশিদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা আমিন উর রশীদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান। এর আগে রাতে ঢাকা থেকে কমিটি ঘোষণার পর সাড়ে ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের রেসকোর্স এলাকায় কুমিল্লা বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর করেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিতে মহানগর যুবদলের সভাপতি উত্বাতুল বারী ওরফে আবুকে ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হন মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান। এ কারণে রাত ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আমিরুজ্জামান বলেন, ‘এ কমিটি আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ করেছে। যাঁরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে গিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন, তাঁদের দলের সদস্যসচিব করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে জীবনে একটি জিডি হয়নি, তাঁরা দলের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আমি যাঁদের নিয়ে রাজনীতি করব, তাঁরা যদি দলে ভালো পদ না পান, তাহলে কাদের নিয়ে রাজনীতি করব। এ অবস্থায় আমি মহানগর আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।’

একই দিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাবেক সংসদ সদস্য আমিন উর রশিদকে আহ্বায়ক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জসিম উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়।

একই সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম বলেন, ‘যাঁকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব করা হয়েছে, তাঁর নামের আগে ‘পাগলা’ শব্দ আছে। তাঁকে মানুষ পাগলা জসিম বলেন। তাঁর বাড়ি ভারতীয় সীমান্ত এলাকায়। তিনি মাদক ও সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। টাকার বিনিময়ে এই কমিটি আনা হয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি এক শতাংশও সঠিক হয়, তাহলে রাজনীতি থেকে চিরতরে ইস্তফা দেব। প্রশাসন ও সাংবাদিকরা তদন্ত করে দেখুন।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম চৌধুরী, আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, সরওয়ার জাহান দোলন, রেজাউল কাইয়ুম, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, মো. বিল্লাল ও উত্বাতুল বারী।

কুমিল্লা বিভাগের দায়িত্ব পাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্র কমিটি গঠন করেছে। কমিটি প্রকাশের পর কে বা কারা আমার বাসায় গিয়ে ভাঙচুর করে। বিষয়টি দল দেখছে।’