খোলা ট্রাকে বালু-মাটি বহন করায় মানুষের চোখমুখে বালু-ধূলিকণা ঢুকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত বুধবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিড মিল এলাকায়
খোলা ট্রাকে বালু-মাটি বহন করায় মানুষের চোখমুখে বালু-ধূলিকণা ঢুকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গত বুধবার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিড মিল এলাকায়

ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক

খোলা গাড়িতে বালু পরিবহন, দুর্ভোগ

ট্রাকে বালু-মাটি বহনের ক্ষেত্রে কাপড় বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে বহন করার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে খোলা ট্রাকে করে বালু-মাটি বহন করা হচ্ছে। এতে বালু-ধূলিকণা বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ করছে। সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে যেন উদাসীন।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা, গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের আশপাশ এলাকা থেকে বালু তুলে ও মাটি কেটে ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে বহন করা হচ্ছে। এই বালু-মাটি বিভিন্ন বসতবাড়ির ভিটা উঁচুকরণ, গর্ত ভরাটসহ ইটভাটার কাজে নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রাকে বালু-মাটি বহনের ক্ষেত্রে কাপড় বা প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে বহন করার কথা। কিন্তু বালু-মাটি ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। ফলে চলন্ত ট্রাক থেকে বালু-ধূলিকণা উড়ে সড়কে চলাচলকারী মানুষের চোখমুখে লাগছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন তাঁরা। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের চালকদের এ কারণে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাট সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বালুর চাতাল। ফেরি থেকে পরিবহন ওঠানামার সময় যাত্রীরা ওই চাতালের বালু-ধূলিকণার জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘাট এলাকাসহ আশপাশ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন খোলা ট্রাকে করে বালু-মাটি ভরাট করে দূরদূরান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার কয়েক স্থানে এভাবে স্থানীয় অনেকে বালুর ব্যবসা করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ফেরিতে ওঠানামা করছে। সবার একই রকম অভিজ্ঞতা।

স্থানীয় লোকজন জানান, বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। আবার যানবাহনের চালক বা সহকারী এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো গালিগালাজের শিকার হতে হয়।

গত বুধবার দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকা মেহেরপুর থেকে আসা ঢাকাগামী একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক আবদুল আলিম বলেন, ফেরিতে উঠতে প্রায় অনেক সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তখন বাতাসে সড়কের পাশে থাকা বালুর স্তূপ থেকে বালু উড়ে চোখমুখে লাগে। এ সময় গাড়িতে থাকা যাত্রীরা চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন। বাধ্য হয়ে গাড়ির সব জানালা বন্ধ করে গরমে গাড়িতে বসে থাকতে হয়।

আবদুল আলিম আরও বলেন, ফেরিঘাটে ধুলাবালুর সমস্যা নিয়ে কে কাকে কী বলবে? ঝামেলায় জড়াতে চান না​ বলে চুপচাপ সহ্য করে সবাই চলে যান।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিড মিল এলাকা পার হচ্ছিল একটি খোলা ড্রাম ট্রাক। ট্রাকটির পেছনে বা সামনের কোথাও নম্বর নেই। নম্বরবিহীন ট্রাকটি বালু বোঝাই করে দ্রুতগতিতে গোয়ালন্দ বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পেছন পেছন কিছু দূর আসার পর ধুলাবালুর কারণে আর থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। পদ্মার মোড় এলাকায় গাড়ির জটের কারণে ট্রাকটির গতি কমে যায়।

এ সময় জানতে চাইলে চালক লালন সরদার বলেন, ‘আমরা তো বহুদিন ধরে এভাবেই খোলা গাড়িতে করে বালু-মাটি আনা–নেওয়া করি।

চলন্ত পথে মাঝেমধ্যে পথচারীদের কিছু সমস্যা হলেও বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। এ ছাড়া কেউ তো কখনো বাধা দেয়নি বা বারণও করেনি। তবে হ্যাঁ, বালু কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলে হয়তো এ সমস্যা হতো না।’

জানতে চাইলে গোয়ালন্দ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গোয়ালন্দে খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশ দূষণ করছে। তিনি বলেন, চলাচলে এভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা, পরিবেশ ও বায়ুদূষণের বিষয়টি দণ্ডবিধির ২৯১ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেল, জরিমানা যেকোনো কিছু করতে পারেন।