মাগুরায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই সম্ভাব্য সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে চারজন নিহতের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরও মামলা হয়নি। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা করতে দেরি হচ্ছে বলে জানান নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। এদিকে এ ঘটনার পর হামলা ও লুটপাটের আশঙ্কায় অনেকেই এখনো গ্রাম ছাড়ছেন ও ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন।
গত শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটায় মাগুরা সদর উপজেলার জগদল গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকায় সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। সেখানে এক পক্ষের দুই ভাইসহ তিনজন এবং অপর পক্ষের একজন নিহত হন। ময়নতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। ওই দিন রাতেই তিনজনকে জগদল গ্রামের একটি কবরস্থানে এবং অন্যজনকে অপর একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা না হওয়ার বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান আজ রোববার বেলা পৌনে তিনটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাঁরা আসলেই মামলা হবে। তবে দেরিতে মামলা হলেও পুলিশের তদন্তে কোনো সমস্যা হবে না।
এই সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার রাতে চারজনকে আটক করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ। তবে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ। তাঁরা এখন কী অবস্থায় আছে, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি পুলিশ।
দুই দিন পরও মামলা না করার বিষয়ে ওই সংঘর্ষে নিহত সবুর হোসেন মোল্লার স্ত্রী মিলিনা খাতুন আজ দুপুরে বলেন, একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। দুজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসব কারণে মামলা করতে একটু দেরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ওই সংঘর্ষে নিহত অপর পক্ষের ইমরান মোল্লার ভগ্নিপতি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই চলে গেছে। শ্বশুর–শাশুড়ি দুজনই অসুস্থ্ হয়ে পড়েছে। পরিবার ও দলের লোকজনের সঙ্গে বসে আলোচনা করে মামলা করব।’
সংঘর্ষের পর থেকেই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা আছে। তবে লুট ও হামলার আতঙ্কে গতকাল অনেককে ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। বিবদমান দুটি পক্ষের বেশির ভাগের বাড়ি গিয়ে কোনো পুরুষ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। নারীরা বাড়িতে থাকলেও তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
আজ দুপুরে নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে স্বজনদের সান্ত্বনা ও খোঁজখবর নিতে গিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু, সহসভাপতি আবু নাসির, মুন্সি রেজাউল ইসলাম ও প্রচার সম্পাদক শাখারুল ইসলাম।
পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের খোঁজখবর নিতে তাঁরা গিয়েছিলেন। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাগুরা সদর উপজেলার জগদল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম ও সৈয়দ হাসান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ওই ইউপি সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শুক্রবার সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন নিহত হন। তাঁরা হলেন জগদল গ্রামের কবির মোল্লা (৫২), সবুর মোল্লা (৫০), রহমান মোল্লা (৫৬) ও ইমরান মোল্লা (২৫)। তাঁদের মধ্যে সবুর ও কবির দুই ভাই। আর রহমান মোল্লা সবুর ও কবিরের চাচাতো ভাই। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কবির, সবুর ও রহমান সম্ভাব্য প্রার্থী সৈয়দ হাসানের সমর্থক ছিলেন। ওই সংঘর্ষে নিহত ইমরান বর্তমান ইউপি সদস্য নজরুলের সমর্থক ছিলেন।