ঘরে এক দিনের খাবারও ছিল না সোমার
পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে সোমা তালুকদার আশ্রয় নিয়েছেন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। গত ১৬ জুন বন্যার পানিতে তাঁদের ঘর ভেসে গেছে। ২০ দিন ধরে সেখানেই আছে সোমার পরিবার। লোকজনের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে চলছেন।
গতকাল বুধবার হাওরবেষ্টিত ধর্মপাশা উপজেলায় বন্যায় বিপাকে পড়া সোমার মতো ১৩০ জন নারী-পুরুষকে প্রথম আলো ট্রাস্টের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। খাদ্যসামগ্রী পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন।
খাদ্যসাহায্য পেয়ে সোমা তালুকদার বলেন, ‘ঘর ভেসে গেছে বন্যায়। স্কুলে আশ্রয় নিছি। কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। সাহায্যের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই। এক দিনের খাবারও ঘরে নাই। এই খাবার দিয়ে কয়েকটা দিন চলবে।’ তিনি সরকারের কাছে একটা ঘর তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
ধর্মপাশা উপজেলার মাইজবাড়ী, সলপ, জয়শ্রী, নূরপুর, রাজাপুর, ধর্মপাশা, বাখরপুর, লক্ষ্মণখলা, দিগজান, বৌলাম, উত্তরবীর, মাটিকাটা, বীর দক্ষিণ পূর্বপাড়া, বীর দক্ষিণ পশ্চিমপাড়া, দশধরী, জারারকোনা, নলগড়া, রাজনগর ও দেওলা গ্রামের বাসিন্দারা খাদ্যসামগ্রী পান। খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি আটা, এক কেজি লবণ এবং ১০০ গ্রাম করে মরিচ ও হলুদের গুঁড়ার প্যাকেট।
সাত মাস আগে জয়শ্রী গ্রামের সন্ধ্যা রানীর স্বামী ক্যানসারে মারা যান। কিছু জমি বিক্রি করে, ভিটেবাড়ি বন্ধক রেখে স্বামীর চিকিৎসা করিয়েছিলেন। ছোট তিন ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন সন্ধ্যা রানী। এবারের বন্যায় তাঁর বসতঘরটিও ধসে গেছে। আরেক প্রতিবেশীর বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ধর্মপাশা উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯ হাজার মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত ১০০ মেট্রিক টন চাল, ১৪ লাখ টাকা এবং ২ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে ১ লাখ টাকার শিশুখাদ্য ও ১ লাখ টাকার পশুখাদ্য দেওয়া হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
ষাটোর্ধ্ব গৌরী রানীর সাত সদস্যের সংসার। তাঁর একটি ছেলে প্রতিবন্ধী। আরেক ছেলের চায়ের দোকানের আয়ে সংসার চলত। বন্যার পানি ঢোকায় দোকান বন্ধ। গৌরী রানী বলেন, ‘বাড়িতে কোমরপানি উঠসিল। আরেক বাড়িতে আশ্রয় নিই। পানি নামলেও ঘর আর থাকার মতো নাই। দোকান বন্ধ, ঘরে খাওন নাই।’
স্বাধীন মিয়া ভ্রাম্যমাণ পান বিক্রেতা। বন্যার পানিতে মাইজবাড়ী গ্রামে স্বাধীনের বসতঘর ভেসে গেছে। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্যের বাড়িতে আছেন। স্বাধীন বলেন, ‘পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারি নাই। অন্যের বাড়িতেই থাকা লাগছে। সাময়িক সাহায্যের চেয়ে সরকার যদি স্থায়ী কোনো আয়ের ব্যবস্থা করত, ভালো হতো।’
ত্রাণ বিতরণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান, ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ধর্মপাশা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবায়ের পাশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে মুরাদ, ধর্মপাশা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এনামুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় প্রথম আলো ট্রাস্টকে ধন্যবাদ জানান ইউএনও মুনতাসির হাসান।