বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২১ সালে তা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বগুড়ার ২৫০ শয্যা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও উপকরণের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর বগুড়ায় এক জনসভায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আগুনে পোড়া ও অ্যাসিডদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর হাসপাতালে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পৃথক ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ টি এম নুরুজ্জামান বলেন, বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে নবনির্মিত ভবন হস্তান্তর করা হয়। এতে বার্ন ইউনিটের জন্য ১০ শয্যাবিশিষ্ট ২টি বিশেষায়িত ওয়ার্ড, অস্ত্রোপচার কক্ষ, পর্যবেক্ষণ ইউনিট, চিকিৎসকদের বিশ্রামকক্ষ, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চেম্বারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। ভবন বুঝে নেওয়ার পর থেকেই বার্ন ইউনিট চালুর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, অস্ত্রোপচারকক্ষসহ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দফায় দফায় চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চিকিৎসক, সেবিকা ও স্বাস্থ্যকর্মীর পদ সৃষ্টি করা হয়নি। কোনো যন্ত্রপাতিও বরাদ্দ মেলেনি। বার্ন ইউনিট চালুর জন্য এ পর্যন্ত পাঁচ দফা চিঠি পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ মাস দু-এক আগেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। তখন বার্ন ইউনিটের ভবনে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপন করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট চালুর জন্য মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। এতে বার্ন ও সার্জারি বিষয়ে ১ জন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, বার্ন ও সার্জারির ২ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ২ জন সহকারী রেজিস্ট্রার, ৪ জন আইএমও (ইনডোর মেডিকেল অফিসার), ৪ জন চিকিৎসা কর্মকর্তা, ২ জন অবেদনবিদ, ১৬ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ১২ জন অফিস সহায়ক, ১২ জন ওয়ার্ড বয় ও ৮ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ সৃষ্টির আবেদন করা হয়েছে। বার্ন ইউনিট চালুর জন্য হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) বেড, ভেন্টিলেটর ও মনিটর স্থাপন করা হয়েছে।
বর্তমানে বগুড়া ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আগুনে পোড়া ও অ্যাসিডদগ্ধ রোগীর চিকিৎসাসেবা চলছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সার্জারি বিভাগের দুটি কক্ষকে আপাতত বার্ন ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় পোড়া রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় ১০ শতাংশ রোগীকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতালের নার্সরা বলেন, গত ৬ মে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নের তেলিহাটা কর্মকারপাড়ায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া দাহ্য পদার্থে তিন মাসের এক শিশুসহ একই পরিবারের ঘুমন্ত তিন সদস্য দগ্ধ হন। তাঁরা হলেন দুলাল কর্মকারের স্ত্রী দীপালি রানী কর্মকার (৪৫), তাঁর পুত্রবধূ বীণা রানী কর্মকার (২৪) ও বীণা রানী কর্মকারের তিন মাসের শিশুসন্তান সূর্য কর্মকার। রাতেই তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন ভোরে তাঁদের ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।
বীণার স্বামী সাগর কর্মকার বলেন, ২ জুন পর্যন্ত ঢাকায় স্ত্রী-সন্তান ও মায়ের চিকিৎসা চলেছে। এক মাসে সব মিলিয়ে লাখ দু-এক টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে রোগীর ওষুধ ছাড়াও সঙ্গে থাকা লোকজনের থাকা-খাওয়া বাবদ মোটা অঙ্কের খরচ হয়েছে। বগুড়ায় পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসুবিধা থাকলে অর্ধেক খরচই বেঁচে যেত।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সার্জারি বিভাগের ১৬ শয্যাবিশিষ্ট দুটি কক্ষে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে গড়ে ৬০ জন এবং বছরে ৭২০ পোড়া রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন তাঁদের হাসপাতালে। পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট চালু না থাকার কারণ প্রশিক্ষিত জনবল ও উপকরণের অভাব। ফলে আগুনে বেশি পোড়া রোগী এলে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।