যশোরের মনিরামপুর

জরাজীর্ণ সেতু, বেহাল সংযোগ সড়ক

এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে চলাচল করেন ইউনিয়ন দুটির পাঁচ গ্রামের কয়েক শ মানুষ।

জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে লোকজন চলাচল করছে। ৪ জুলাই মনিরামপুর উপজেলার দহকুলা গ্রামে।
 ছবি: প্রথম আলো

দহকুলা খালের দুই পারে দুই ইউনিয়ন। দুই গ্রাম। দক্ষিণ পারে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দহকুলা গ্রাম। আর উত্তরে একই উপজেলার হরিদাসকাটি ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রাম। খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু দুই গ্রামকে যুক্ত করেছে। সেতুর দুই পাশে ভাঙাচোরা নিচু সড়ক। আর এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে চলাচল করেন ইউনিয়ন দুটির পাঁচ গ্রামের কয়েক শ মানুষ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০২ সালে দহকুলা খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা।

উপজেলার বাগডাঙ্গা দহকুলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে মনিরামপুর-কুলটিয়া পাকা সড়ক থেকে একটি ইট বিছানো সড়ক পশ্চিম-উত্তর দিকে চলে গেছে। কিছুটা দূর গিয়ে বাঁক নিয়ে সড়কটি উত্তরমুখী হয়েছে। প্রায় ৫০০ মিটার গিয়ে বিলে ঢোকার আগে ইটের সড়কটি শেষ হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে একটি খাল। বিলের বুক চিরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে খালটি। খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু। নাম দহকুলা-ভুলবাড়িয়া সেতু।

৪ জুলাই সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর দুই পাশের ইট-সিমেন্টের রেলিং খসে পড়ছে। কয়েকটি স্থানে লোহার রড বেরিয়ে আছে। সেতু থেকে প্রায় ২০০ মিটার উত্তর দিকে ধর্মতলা-বাহাদুরপুর পাকা সড়কে এসে সড়কটি মিশেছে। সেতুর দুই পাশে সড়ক অনেকটা নিচু। কয়েকটি স্থানে সড়কের পাশ ভেঙে মাছের ঘেরের মধ্যে পড়েছে।

এ সময় কথা হয় কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, এলাকার পাঁচ গ্রামের মানুষের সহজে যাতায়াতের জন্য খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। তবে সেতুর দুই পাশে উঁচু করে সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। সড়কের দুই পাশে মাছের ঘের। সড়কের পাশ ভেঙে গেছে। তা ছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে সড়কটি পানিতে তলিয়ে থাকে। তাঁরা জানান, প্রতিদিন দহকুলা, বাগডাঙ্গা, বাহাদুরপুর, ভুলবাড়িয়া ও পাঁচকাটিয়া গ্রামের কয়েক শ মানুষ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করেন। চলাচলের অনুপযোগী সংযোগ সড়ক ধরে জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে তাঁদের খুব কষ্ট হয়। এ ছাড়া ভুলবাড়িয়া গ্রামের ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী বাগডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বর্ষার সময় তাদের তিন কিলোমিটার ঘুরে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।

দহকুলা গ্রামের বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, ১৯ বছর ধরে রাস্তাটি একই অবস্থায় পড়ে আছে। সেতুটির অবস্থাও ভালো নয়। গত কয়েক বছরের জলাবদ্ধতায় সেতুর দুই পাড়ের রাস্তা ভেঙে ঘেরের মধ্যে পড়েছে। বর্ষার সময় রাস্তাটি জলে তলিয়ে থাকে। যাতায়াত করা যায় না। তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি দেখার কেউ নেই।

বাগডাঙ্গা গ্রামের বারেক গাজী বলেন, বিলের ফসল এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি নিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। রাস্তাটি অনেকটা উঁচু করা দরকার। সেতুর অবস্থাও ভালো নয়। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে।

ভুলবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থী নয়ন বিশ্বাস বলে, ‘রাস্তাটি দিয়ে বাড়ি থেকে দহকুলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। কিন্তু রাস্তাটির অবস্থা ভালো নয়। সেতুটিও নড়বড়ে। সহজ হওয়ায় আমরা কষ্ট করে এই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাই। তবে জলে তলিয়ে থাকায় বর্ষাকালে এই রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া যায় না। ওই সময় প্রায় তিন কিলোমিটার ঘুরে বিদ্যালয়ে যাই।’

আগামী বাজেটের বরাদ্দে সড়কটি সংস্কার করার আশ্বাস দেন কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সড়কটি বিলের ভেতর দিয়ে গেছে। এটি সংস্কার দরকার। এলাকার অনেক সড়ক এখনো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।

হরিদাসকাটি ইউপির চেয়ারম্যান বিপদ ভঞ্জন পাঁড়ে বলেন, ‘সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কটি মাটি দিয়ে অনেকটা উঁচু করতে হবে। এরপর ইটের সলিং করতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করছি।