বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত সোমবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও জেলায় টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এতে ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমির কাঁচা-পাকা আমন ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে। পানি দ্রুত না সরলে ধানের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা খুব একটা নেই।
কৃষকেরা জানান, সোমবার রাত থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে টানা বৃষ্টি শুরু হয়। মাঝেমধ্যে বৃষ্টির সঙ্গে চলে দমকা হাওয়া। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো প্রবলবেগে বৃষ্টি হয়। বুধবারও থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার আমন ও রবি ফসলের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়ার ঘনিমহেশপুর, সালন্দরের শিংপাড়া, আউলিয়াপুরের কচুবাড়ি হাটপাড়া, আকচার নীমবাড়ি, বঠিনা, ঢোলারহাট এলাকার বড়দ্বেশ্বরীসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠঘাট তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে খেতের আমন ধান। অনেক এলাকায় ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। দুই একটা ছাড়া প্রায় সব খেতের ধানই মাটিতে হেলে পড়েছে।
আউলিয়াপুরের কচুবাড়ি হাটপাড়া এলাকার কৃষক বিকাশ রায় চৌধুরী চার একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ১৫ দিন পর খেতের ধান কাটার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় তাঁর খেতের ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। তাতে ফলন পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন তিনি। বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, ‘কত কষ্ট করে আমরা আবাদ করেছি। আর যখন কাটার সময় হলো, তখন পাকা ধানে মই দিয়ে গেল বৃষ্টি।’ এলাকার প্রায় সব খেতের ধানের একই অবস্থা বলে জানান বিকাশ।
সদর উপজেলার আকচার বঠিনা এলাকায়ও আমন ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে। সেখানে কথা হয় আমনচাষি জগেশ্বর বর্মণের সঙ্গে। তিনি জানান, শুয়ে পড়া ধানগাছে কয়েক দিনের মধ্যেই পোকায় আক্রমণ করবে। এতে ধান চিটা হয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে। এখন মাঠে ৬ শতাংশ জমির ধান থোর আবস্থায়, ৩৯ শতাংশ জমির ধান ফুল অবস্থায় রয়েছে। এ সময়টা একটু সংবেদনশীল। জেলার ৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমির ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়ার কারণে এ দুই পর্যায়ের জমির ধানে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন আরও বলেন, বৃষ্টিতে আমন ধান ছাড়াও ৬৫০ হেক্টর জমির শীতকালীন আগাম সবজি এবং ২৫০ হেক্টর জমির আগাম আলুর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমি থেকে পানি নেমে গেলে সবজির ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে মুলাজাতীয় সবজি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যাঁরা আগাম আলু লাগিয়েছেন, তাঁদের রোপণ করা আলুবীজ পঁচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বৃষ্টির কারণে জেলায় ফসলের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা কয়েক দিনের মধ্যে নিরূপণ করা সম্ভব হবে।