Thank you for trying Sticky AMP!!

ডিসি, ইউএনও ও এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে মামলা

বিএনপি নেতা ফিরোজ হায়দার খানের বাড়ির পাশে পুনরায় খনন করা পুকুরে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ২৭ নভেম্বর সকালে

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ৮৬ শতাংশ সরকারি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেয় প্রশাসন। পরে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আতাউল গনি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল মালেক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জোবায়ের হোসেনকে আসামি করে তিনি মামলা করেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফিরোজ হায়দার খান উচ্চ আদালতে ওই মামলাটি করেন। ইউএনও মো. আবদুল মালেক তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের নাজিরপাড়া এলাকায় ২৮৬১ নম্বর দাগে ৮৪ শতাংশ সরকারি পুকুর রয়েছে। যার সিএস খতিয়ান নম্বর ৩০৯ ও এসএ খতিয়ান নম্বর ইজা ১। এ ছাড়া পুকুরের পাশে সরকারের ২ নম্বর খতিয়ানে ৩৩০০ নম্বর দাগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ৬ শতাংশ জমি রয়েছে। এই ৯০ শতাংশ জমি টাঙ্গাইলের করটিয়ার জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর কাছ থেকে ১৯৪১ ও ১৯৪২ সালে গোড়াই এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান পত্তন নেন। পরে মান্নানের স্ত্রী জেবুননেছার কাছ থেকে ২০০৭ সালের ১৯ জুলাই ফিরোজ হায়দার খান ওই ৯০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির (ভূমি স্থানান্তর) মাধ্যমে উপজেলা সহকারী কমিশনারের কার্যালয় থেকে ৭৩/২০০৭/০৮ ও ৭৪/২০০৭/০৮ নম্বরে ফিরোজ হায়দার দুটি নামজারি করেন। তবে তিনি নামজারি করলেও জমির খাজনা দিতে হোল্ডিং চালু করতে পারেননি।

এদিকে চলমান মাঠ জরিপে জমিটি ফিরোজ হায়দারের নামে রেকর্ড হয়। এই রেকর্ডের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে জরিপ অধিদপ্তরে আপত্তি জানিয়ে আপিল করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রেকর্ড বাতিল করে তা পুনরায় শুনানির আদেশ দেন। কিন্তু ফিরোজ হায়দার নির্ধারিত তারিখে শুনানিতে উপস্থিত না থেকে জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মাহবুবা হাসনাতের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত শুনানির কার্যক্রম স্থগিত করে ওই পুকুর তাঁকে ভোগ করার নির্দেশ দেন। পরে তিনি পুকুরের চারপাশে প্রাচীর নির্মাণ ও পুকুর ভরাট করেন। বিষয়টি টের পেলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ১৭ মে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে নির্মিত প্রাচীর ভেঙে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি সরিয়ে জমিটিকে পুনরায় পুকুরে পরিণত করা হয়। পুকুরে পরিণত করার এ কাজ শেষ হয় গত ২০ আগস্ট। পরে সেখানে সায়রাত রেজিস্ট্রার (জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত) ভুক্ত উল্লেখ করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয় প্রশাসন।
এ ঘটনার পর গত ৩০ মে ও ৩১ আগস্ট ডিসি, ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের নামে পৃথক দুটি আইনি নোটিশ পাঠান ফিরোজ হায়দার খান। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি উচ্চ আদালতে তাঁদের নামে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফিরোজ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা আমার জায়গায় এসে ঝামেলা করেছেন, বাউন্ডারি ভাঙছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করেছেন। আমি আমার নিরাপত্তার জন্য বাউন্ডারি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা তা ভেঙে ফেলেছেন। এসব কারণে আমি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার মো. জোবায়ের হোসেন জানান, ওই ৯০ শতাংশ জমির মধ্যে ৪ শতাংশ সওজ অধিগ্রহণ করেছে। অধিগ্রহণকৃত জমির টাকা তোলার জন্য ফিরোজ হায়দার খান চেষ্টা করছেন। তবে সরকারি জমি হওয়াতে তিনি সেই টাকা পাবেন না।
জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি জানান, ‘ফিরোজ হায়দার আদালতকে ভুল বোঝাচ্ছেন। তিনি নিজের স্বার্থে জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করছেন। তিনি তাঁর বাড়ির পাশের পুকুর ভরাট করে বাড়ির জায়গা বাড়ানোর জন্য প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। এতে তিনি আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করছেন। তাই ওই প্রাচীর ভেঙে পুনরায় পুকুর করা হয়েছে। আমরা বিজ্ঞ আদালতে আমাদের কৌশলীর মাধ্যমে জবাব দাখিল করে এই মামলার মোকাবিলা করব।’