প্রধান শিক্ষিকার গ্রেপ্তার চেয়ে রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শৈলকুপা পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন জোয়ার্দ্দারের অপসারণ, তাঁকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার তাঁরা এই দাবিতে উপজেলা চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। তাঁরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষিকার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
এর আগে একই অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে তিন সাংবাদিকের নামে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য পোস্ট করেন। এ নিয়ে গত ৩১ মার্চ তাঁর বিরুদ্ধে সাংবাদিক শামীম বীন সাত্তার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শৈলকুপা থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পর প্রধান শিক্ষিকাকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিন। এ ছাড়া তিনি যোগদানের পর থেকে নান অনিয়ম, দুর্নীতি, শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ফেসবুকে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও মন্তব্য পোস্ট করেছেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে প্রচার-প্রকাশিত হয়। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে তদন্ত চলছে। কয়েকটি তদন্তে কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে এই শিক্ষিকা
একের পর এক অনিয়ম করেই চলেছেন। এসবের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা সম্পর্কে সাংবাদিক শামিম বীন সাত্তার জানান, প্রধান শিক্ষিকা দিলারা ইয়াসমিনের দুর্নীতির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় ও টিভি চ্যানেলে প্রচারের পর তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি স্কুলের নামে পরিচালিত ফেসবুক আইডিতে তিন সাংবাদিকের ছবিসহ একটি মানহানিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পোস্ট দেন। ওই পোস্টে ঝিনাইদহের সাংবাদিক আসিফ ইকবাল, ডিবিসি চ্যানেলের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি আবদুর রহমান ও তাঁর(শামিম বিন সাত্তার) ছবি ব্যবহার করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক আসিফ ইকবাল ঝিনাইদহ থানায় জিডি করেন। জিডি করার পর ফেসবুক থেকে আপত্তিকর পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন দিলারা ইয়াসমিন। জিডির তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান শৈলকুপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়। গত ২০ মার্চ পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানের পাঠানো পরামর্শ চিঠির আলোকে তিনি (সাপ্তাহিক ডাকুয়া পত্রিকার সম্পাদক শামিম বিন সাত্তার) ৩১ মার্চ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আইয়ুবুর রহমান জানান, ২০১৮ সালে প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওসমান গণি জানান, ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে নানা সময়ে একাধিক অভিযোগ করেছেন অন্য কয়েকজন শিক্ষক, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। এখন তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।