Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রীতিলতা জাদুঘর, নাম ছাড়া কিছু নেই

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বাংলার প্রথম শহীদ নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে আত্মহত্যা করেছিলেন। সেই ক্লাবটি ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা জাদুঘর’ নামে পরিচিতি পেলেও কার্যত সেখানে কিছু নেই। নামেই সার। রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পর্যায়ের এক প্রকৌশলীর দপ্তর হিসেবে সাবেক ইউরোপিয়ান ক্লাবটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

আজ বুধবার দুপুরে গিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বীরকন্যা প্রীতিলতা জাদুঘরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ব্রিটিশেরা ১৯৪৭ সালে চলে যাওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সেমিপাকা ঘরটি রেলওয়েকে দেয়। এর ঘরটি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক প্রকৌশলীর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক নাসিরউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবেক ইউরোপিয়ান ক্লাবটি রেলের একজন প্রকৌশলীর দপ্তর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি কক্ষ প্রীতিলতা জাদুঘর হতে পারে। তবে সেখানে কী আছে, আমার জানা নেই।’

গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামে এসেছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তিনি চট্টগ্রামের রাউজান কলেজের পাশে বিপ্লবী সূর্য সেনের নামে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং মন্তব্য বইয়ে অনুভূতি লেখেন। এরপর সূর্য সেনের নামে পাঠাগার উদ্বোধন ও কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া রাউজানের নোয়াপাড়ায় সূর্য সেনের জন্মভিটায় যান। যাত্রাপথে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব এবং পরে দামপাড়া পুলিশ লাইনে অস্ত্রাগার পরিদর্শন করেন। ওই অস্ত্রাগারটি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় লুট করেছিলেন বিপ্লবীরা। পাহাড়তলীতে প্রীতিলতার ভাস্কর্য দেখেছিলেন তিনি।

প্রণব মুখার্জি চলে যাওয়ার পর ইউরোপিয়ান ক্লাবটিতে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সাংসদ আফসারুল আমিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্লাবটি জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।

আজ প্রীতিলতার ভাস্কর্যের পাশে কথা হয় স্কুলছাত্র সোহেল হোসেনের সঙ্গে। সোহেল প্রথম আলোকে জানায়, এই এলাকায় স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা বেশি। মাঝেমধ্যে বাইরের লোকজন ভাস্কর্য দেখতে আসেন। প্রীতিলতার নামে জাদুঘর আছে। কিন্তু ভেতরে কী আছে, জানা নেই।

চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে বীরকন্যা প্রীতিলতার জন্ম। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রথম নারী শহীদ তিনি। মাস্টারদা সূর্য সেনের অন্যতম সহযোগী প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ‘ইউরোপিয়ান ক্লাব’ আক্রমণ করেন আটজন বিপ্লবী। দাম্ভিক ব্রিটিশরা ‘কুকুর ও ভারতীয়রা নিষিদ্ধ’ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে এই ক্লাবে বসেই বাংলার বিপ্লবীদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচারের নানা পরিকল্পনা করত। চট্টগ্রামে ব্রিটিশদের বিনোদনেরও কেন্দ্র ছিল সেমিপাকা এই ঘরটি।

ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে গুলিবিদ্ধ প্রীতিলতা সহযোগীদের নিরাপদে পাঠিয়ে ইংরেজ সৈন্যদের হাতে ধরা না দিয়ে ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ মুখে পুরে দিয়ে আত্মাহুতি দেন। তাঁর স্মরণে ৭ বছর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা ভাস্কর্য’ উন্মোচন করা হয়।

চট্টগ্রামে নগরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনের সড়কদ্বীপে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। কলকাতার ভাস্কর গৌতম পাল তাম্র দিয়ে প্রীতিলতার এই আবক্ষমূর্তি তৈরি করেন। কিন্তু জাদুঘরে কিছু নেই।