মৌলভীবাজারের বড়লেখা

ফুলের হাটে রাধাচূড়ার প্রথম হাসি

ফুলের হাটে রাধাচূড়ার প্রথম হাসি। গত বছর শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে সড়কের পাশে নানা জাতের ফুলের গাছ লাগায় পৌর কর্তৃপক্ষ। এবার সেই গাছে প্রথম ফুল ধরেছে। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌর শহরে
ছবি: প্রথম আলো

সড়কের দুই ধারে সারি সারি ফুলের গাছ। শিমুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জবাসহ নানা রঙের ফুল। বছরখানেক আগে শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে এমন নানা ধরনের ফুলের চারা লাগিয়েছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে সেগুলো মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। হাসতে শুরু করেছে রাধাচূড়া। ফুলের হাটে যেন রাধাচূড়ার প্রথম হাসি। হলুদ-লাল ফুলে এলাকাজুড়ে রঙের ঢেউ। হাকালুকি হাওরপারের গ্রামটিতে এখন শুধু রঙের উচ্ছ্বাস। নজরকাড়া এই চিত্র মৌলভীবাজারের বড়লেখা পৌরসভার বিভিন্ন পথে-প্রান্তরের। সবুজ অরণ্যে রঙিন ফুলের দৃশ্য দেখে নজর কাড়ছে যে কারও।

সম্প্রতি পৌর এলাকার কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বড়লেখা বাজারের পশ্চিমের সড়ক ধরে সামনে এগোতেই চোখে পড়ে সড়কের দুই ধারে শিমুল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার সারি সারি গাছ। রেললাইনের এক পাশ দিয়ে গাছগুলো অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। তেলিগুল-বারইগ্রাম সড়কের দুই ধারের শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু গাছগুলো ১০ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় দুলছে।

যখন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আসি, তখনই শহরটা সুন্দর করার কথা মাথায় আসে। ভেবেছি অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে, কিছু সমস্যা সমাধানের পর্যায়ে আছে। এখন শহরটা সুন্দর করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই শহরে ফুল গাছ লাগানো শুরু করি।
আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, মেয়র, বড়লেখা পৌরসভা

তেলিগুল-বারইগ্রাম সড়ক ধরে কিছু দূর এগোতেই দেখা মেলে লংলিয়া ছড়া (খাল)। ছড়াটি আগে ভরাট ও অপ্রশস্ত ছিল। সম্প্রতি সেটি খনন করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। খননের পরে দুই পাড় প্রশস্ত হয়েছে। পাড়ে লাগানো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, সোনালু ছাড়াও বিভিন্ন জাতের জবা। কয়েকজন শ্রমিককে ফুল গাছের আগাছা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। গাছ যাতে হেলে না পড়ে, সে জন্য বাঁশের খুঁটি স্থাপন ও গরু-ছাগল থেকে গাছগুলোর সুরক্ষায় বেড়া দেওয়া হয়েছে।

বন্ধু ও সহকর্মীদের নিয়ে বারইগ্রামে ফুলের হাসি দেখতে এসেছেন বড়লেখা নজরুল একাডেমির উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক জুনেদ রায়হান। ফুল দেখে মুগ্ধ সবাই। জুনেদ রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বড়লেখা পৌর মেয়র খুবই রুচিশীল মানুষ। নান্দনিক কাজে তাঁর আগ্রহ অনেক। খুঁজে খুঁজে সমস্যার সমাধান করেন। তাঁর আগে কেউ শহরটাকে নিয়ে এভাবে ভাবেনি। তাঁর লাগানো গাছে প্রথম ফুল ফুটেছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। সব গাছে ফুল ফুটলে বড়লেখা শহর নতুন করে পরিচিতি পাবে।

সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে এভাবে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো হয়। ছবিটি বড়লেখা পৌরসভার বারইগাম থেকে তোলা

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম সড়কের পৌর এলাকা, বড়লেখা-শাহবাজপুর সড়কের পৌর এলাকা এবং বড়লেখা বাজার থেকে তেলিগুল পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার এলাকায় সড়কের দুই ধারে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, সোনালু, রাধাচূড়া, চেরি, জবাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় তিন হাজার ফুল গাছের চারা লাগানো হয়। এ ছাড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরে প্রায় দুই হাজার নিমসহ ঔষধি, তাল ও নারকেলগাছের চারা বিতরণ করা হয়। ফুল গাছ লাগানোর এ ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে।

বড়লেখা পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখন দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বে আসি, তখনই শহরটা সুন্দর করার কথা মাথায় আসে। ভেবেছি অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে, কিছু সমস্যা সমাধানের পর্যায়ে আছে। এখন শহরটা সুন্দর করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই শহরে ফুল গাছ লাগানো শুরু। ইতিমধ্যে আরও পাঁচ হাজার গাছের চারা সংগ্রহ করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলো রোপণের কাজ শুরু করা হবে।’

বড়লেখা রেললাইনের পাশের সড়কে দুই পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল ও সোনালু ফুলের গাছ। সম্প্রতি বড়লেখা পৌর শহরে

পৌর মেয়র বলেন, বড়লেখা জেলার অন্যতম পর্যটন এলাকা। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা, চা–বাগান, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা খাসিয়া পুঞ্জিসহ অনেক কিছুর অবস্থান এখানে। পর্যটকদের আনন্দ উপভোগের জন্য শহরটাকেও সাজিয়ে তুলতে চান। এ জন্য সবার সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মনে করেন।