পলিথিন ও নানা রকম বর্জ্য কোদালীছড়ার বিভিন্ন স্থানে জমাট হয়ে বৃষ্টির পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে।

মৌলভীবাজার শহরের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম কোদালীছড়া। দোকান ও বাসাবাড়ির বর্জ্য, পলিথিনে ক্রমশ ভরাট হচ্ছে এটা। পলিথিন ও নানা রকম বর্জ্য কোদালীছড়ার বিভিন্ন স্থানে জমাট হয়ে বৃষ্টির পানিপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। নির্দিষ্ট স্থান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সরাসরি কোদালীছড়াসহ শহরের বিভিন্ন নালা-নর্দমায় প্লাস্টিক পণ্য, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন ফেলায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘কোদালীছড়া বাঁচলে শহর বাঁচবে। জলাবদ্ধতা থেকে শহরকে রক্ষা করতে কোদালীছড়াকে বাঁচাতে হবে। শহরের কোনো নর্দমায় ময়লা ফেললে তা কোদালীছড়াতে এসে পড়ে। কোদালীছড়াতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় কোদালীছড়ার বিভিন্ন স্থান ভরাট হয়ে উঠছে। এভাবে ভরাট হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।’ মেয়র বলেন, ‘আমরা নিয়মিত শ্রমিক দিয়ে তা পরিষ্কার করছি। মানুষ নালার মধ্যে পলিথিন, লুঙ্গি, শাড়ি, সিমেন্টের বস্তা ফেলছে। সবাই সচেতন না হলে জলাবদ্ধতা থেকে শহরকে রক্ষা করা মুশকিল হবে।’
একাধিক দিন মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব সুলতানপুর, আরামবাগ, সৈয়ারপুর, কোর্ট রোড, শমশেরনগর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার নালা-নর্দমা, কোদালীছড়ার বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, নালা ও কোদালীছড়ার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রঙের পলিথিনের প্যাকেট, একবার ব্যবহার্য (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিকসামগ্রী, পানি ও বিভিন্ন জাত পানীয়ের বোতল, বিস্কুট ও চিপসের খালি প্যাকেট, মোরগের পালক, ছেঁড়া কাপড়সহ সংসারের ব্যবহার্য বিভিন্ন বর্জ্য পড়ে আছে। পানির তোড়ে বিভিন্ন নালা-নর্দমা থেকে এসব বর্জ্য ভেসে এসে কোদালীছড়ায় মিশছে। পানি কমে আসার পর এসব বর্জ্য শুকনো মাটিতে, জলজ ঝোপঝাড়ে, শুকনো স্থানে আটকে আছে। এতে কোদালীছড়া ভরাট হয়ে উঠছে।
কোদালীছড়া খনন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে গড়ে ওঠা ‘গড়ব স্বপ্নের শহর’ ক্যাম্পেইন আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা হাসানাত কামাল বলেন, ‘কিছু মানুষের অসচেতনতায় কোদালীছড়া আবার ভরাট হয়ে উঠছে।’
পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের পূর্ব প্রান্ত বর্ষিজোড়া পাহাড় থেকে কোদালীছড়ার উৎপত্তি। কোদালীছড়া শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে হাইল হাওরে গিয়ে মিশেছে। কোদালীছড়া শহরের বর্জ্যপানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ কোদালীছড়ার ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার রয়েছে মৌলভীবাজার পৌর শহর এলাকায়। বাকি অংশটুকু শহরের বাইরে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর, গিয়াসনগর ও নাজিরাবাদ ইউনিয়ন হয়ে হাইল হাওরে গিয়ে মিশেছে। এতে কোদালীছড়া ভরাট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও তা খুব কাজে আসেনি। বর্ষণ হলেই বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে পৌরসভা, প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে কোদালীছড়া খনন করা হয়েছে।
এদিকে কোদালীছড়ার উন্নয়নে প্রায় ২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে গাইড ওয়াল নির্মাণ, ওয়াকওয়ে তৈরিসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে। বর্তমানে গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। শহরের বর্জ্য ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান আছে। বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নিয়ে আসার ব্যবস্থা আছে; যা নির্দিষ্ট সময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে আসছেন। তা সত্ত্বেও অনেকে নালার মধ্যে পলিথিন, দোকান ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলছেন। এতে কোদালীছড়া ভরাট হয়ে উঠছে।